ইন্টারনেট আবিষ্কারের ইতিহাস-বাংলাদেশে কবে ইন্টারনেট চালু হয়

ইন্টারনেট আবিষ্কারের ইতিহাস ও বাংলাদেশে কবে ইন্টারনেট চালু হয় এই আর্টিকেলে আপনি জানতে পারবেন বিস্তারিত।বিশ্বজুড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটি যুগান্তরকারী নাম হল ইন্টারনেট। পৃথিবীর মধ্যে যে কোন যোগাযোগ ব্যবস্থায় এর ব্যবহার অনেক সুদূরপ্রসারী।

ইন্টারনেট-আবিষ্কারের-ইতিহাস

খুব কম সময়ে ঘরে বসে ব্যবসা-বাণিজ্য শেয়ার লেনদেন শিক্ষা ব্যবস্থা খেলাধুলা এক কথায় যোগাযোগ যেকোনো কাজ সম্পন্ন করা হয়। পৃথিবীর যেকোনো দেশে বসে যে কোন শিক্ষার্থী অনায়াসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্ব বিখ্যাত লাইব্রেরীর যেকোনো বইয়ের খোঁজ নিতেও পারে।

পেজ সূচিপত্রঃ ইন্টারনেট আবিষ্কারের ইতিহাস

ইন্টারনেট আবিষ্কারের ইতিহাস

ইন্টারনেট আবিষ্কার হয়েছে অনেক আগেই কিন্তু বাংলাদেশে অনেক পরে ইন্টারনেট এসেছে। এখন বর্তমানে যতদিন বাড়ছে তত দিন দিন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। ১৯৬০ এর দশকে মার্কিন সামরিক বাহিনীর গবেষণায় অ্যাডভান্স রিসার্চ প্রজেক্ট এজেন্সি বা আর্পা (ARPA) পরীক্ষামূলক ভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণাগারে মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য তৈরি করা হয়।

এটি মূলত প্যাকেট সুইচিং পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়। এই নেটওয়ার্ক আরপানেট (ARPANET)  নামে পরিচিত ছিল। ১৯৬৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের অর্থায়নে তৈরি করা হয়েছিল এটি। ARPANET নেটওয়ার্ক ছিল ইন্টারনেটের প্রথম রূপের ভিত্তি। এরপর ধীরে ধীরে বিশ্বের কাছে এটি গবেষণায় নতুন রূপ ধারণ করে।

প্রথম যখন ইন্টারনেট পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয় তখন এর নাম ছিল (ARPANET)। এটি ১৯৬৯ সালের ১৪ জানুয়ারি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লস এঞ্জেলসে এবং স্টানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মধ্যে প্রথম নেটওয়ার্ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়। এটার মূলত উদ্দেশ্য ছিল পারমাণবিক হামলা ঠেকানো। 

বাংলাদেশ কবে ইন্টারনেট চালু হয়

বাংলাদেশ কবে ইন্টারনেট চালু হয় এখানে আমরা জানবো বাংলাদেশের কোন সময় ইন্টারনেট সেবা চালু করা হয়।বাংলাদেশের ইন্টারনেট চালু করা হয় মূলত ১৯৯৩ সালে। কিন্তু তখন এটা সীমাবদ্ধ ছিল শুধু সরকারিভাবে। এরপরে ১৯৯৬ সালে ইন্টারনেট সেবাটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।ইন্টারনেট আবিষ্কারের ইতিহাস থেকে জানা যায় বাংলাদেশে প্রায় ২৪ বছর পর ইন্টারনেট আসে। 

ইন্টারনেট আবিষ্কারের পর ২৪ বছর পর বাংলাদেশের সরকারিভাবে আসার পর প্রায় আরও তিন বছর পর অর্থাৎ ২৭ বছর পর ইন্টারনেট সেবা চালু করা হয়। ২০২০ সালের মে মাস পর্যন্ত ইন্টারনেট মূলত দু'টি সাবমেরিন কেবল সি-মি-ইউ-৪ এবং সি-মি-ইউ-৫ দ্বারা বাংলাদেশে সরবরাহ করা হতো। যার ব্যান্ডউইথ সরবরাহ সক্ষমতা যথাক্রমে ৩০০ জিবিপিএস ও ১৮০০ জিবিপিএস ছিল।

ইন্টারনেট আবিষ্কারে ইন্টারনেটের পরিচয়

ইন্টারনেট আবিষ্কারে ইন্টারনেটের পরিচয় আমরা জানবো ইন্টারনেট কাকে বলে। ইন্টারনেট একটি জটিল পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া। অসংখ্য নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত বিশ্বব্যাপী বৃহৎ কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে ইন্টারনেট বলা হয়। বিশ্বের সমস্ত কম্পিউটার নিয়ে গঠিত যে যোগাযোগের নেটওয়ার্ক তাই মূলত ইন্টারনেট। ইন্টারনেটে প্রথম আবিষ্কারক হচ্ছেন স্যার টিম বার্নার্স লি। 

তিনি ব্রিটিশ কম্পিউটার বিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি এই কম্পিউটারকে বিংশ শতকের শেষের দিকে এসে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব বা www তৈরি করেন। তিনি বার্নার্স লি হাইপারটেক্সট ট্রান্সফার প্রোটোকল বা http মাধ্যমে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগের প্রথম ইন্টারনেট ওয়েবসাইট তৈরি করেন ১৯৮৯ সালে।  

ইন্টারনেট আবিষ্কারের প্রথম কথা

ইন্টারনেট আবিষ্কারের প্রথম কথায় আমরা জানতে পারি যে ইন্টারনেট মূলত ১৯৬৯ সালে চালু হয়।তবে বাংলাদেশ এটি চালু হয় ১৯৯৩ সালে। বাংলাদেশ কবে ইন্টারনেট চালু হয় এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার পর বোঝা যায় ১৯৯৭ সালে জনসাধারণের জন্য ইন্টারনেট সেবা চালু হয়। ১৯৬৯ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগে ইন্টারনেটের জন্ম হয়। 
ইন্টারনেট-আবিষ্কারের-প্রথম-কথা
যার উদ্দেশ্য ছিল সম্ভাব্য রুশ পারমাণবিক হামলা ঠেকানো। ৭০ এবং ৮০ দশকের যুক্তরাষ্ট্রের আরো অনেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ এ নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হয়। প্রতিরক্ষা বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধনের জন্যে অজস্র নেট তৈরি করা হয়। 

ইন্টারনেট সম্পর্কে জনসাধারণের মাঝে প্রথম ধারণা প্রবর্তিত হয়েছিল যখন কম্পিউটার বিজ্ঞানী অধ্যাপক লিওনার্ড ক্রাইনরক তার গবেষণায় ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, লস এঞ্জেলস থেকে ARPANET এর মাধ্যমে একটি বার্তা স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে পাঠান।

ইন্টারনেট আবিষ্কারের গঠন প্রণালী

ইন্টারনেট আবিষ্কারের ইতিহাস থেকে এখন আমরা ইন্টারনেট আবিষ্কারের গঠন প্রণালী জানবো।ইন্টারনেট আবিষ্কারের গঠন প্রণালী হচ্ছে ইন্টারনেট হচ্ছে শিথিল ভাবে সন্নিবেশিত একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক। যুক্তরাষ্ট্রের চারটি ফাইবার অপটিক কাঠামো রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে-

১. অল্টারনেট ( ALTERNET )

২. পি. এস. আই. নেট ( P.S.I. NET )

৩. এন. এস. এফ. নেট ( N. S. F. NET )

৪. স্প্রিন্ট লিংক ( SPRINT LINK )

ইন্টারনেটের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ

ইন্টারনেটের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহে ইন্টারনেটের নিয়মাবলী ও কর্মকাণ্ড যেন যথাযথ ও সূচারুরূপে সম্পন্ন হয়। সেজন্য তিনটি প্রধান প্রতিষ্ঠান নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠান গুলো হলো-

১. Internet Society : ইন্টারনেটের প্রকৌশল বা প্রটোকলের মান কি হবে তা নির্ধারণ করার জন্য ক্লিয়ারিং হাউস হিসেবে কাজ করে চলে।

২. Internet Network Information Center : এরা ডোমেইন নাম রেজিস্ট্রার করে। 

৩. World Wide Web consortium : এরা ভবিষ্যতে ওয়েবের প্রোগ্রামিং ভাষা কি ধরনের হবে সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য চিন্তা-ভাবনা করে। 

ইন্টারনেটে প্রবেশের সহায়তা

ইন্টারনেটে প্রবেশের সহায়তায় ইন্টারনেটে প্রবেশ করতে হলে চারটি বস্তুর সহযোগিতা প্রয়োজন হয়।যেমন-
ক. কম্পিউটার 
খ. মডেম 
গ. টেলিফোন লাইন 
ঘ. ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার।

ইন্টারনেটের প্রকারভেদ আলোচনা

ইন্টারনেটের প্রকারভেদ আলোচনায় আমরা জানবো ইন্টারনেট প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত কয়েকটি পদ্ধতি। সেগুলো হল- 
১. ই-মেইল (  Electronic mail ev Email ),  ২. ওয়েব ( World wide web ) www , ৩. নেট নিউজ ( Net news ), ৪. চ্যাট ( Internet Relay Chat ) IRC, ৫. আর্কি ( Archie ), ৬. ইউজনেট ( Usenet ), ৭. গোফার ( Gopher ), ৮. ই-ক্যাশ ( E- Cash ) Electronic Cash. 
ইন্টারনেটের-প্রকারভেদ-আলোচনা
ই-মেইলঃ  ই-মেইলের মাধ্যমে যে কোনো সংবাদ প্রেরণ করা যায় এবং তা যে কোন কল্পনা রেকর্ড করতে পারে। ই-মেইলের সাহায্য অতি দ্রুত ফ্যাক্স- এর দশ ভাগের এক ভাগেরও কম সময়ে এবং কম খরচে তথ্যাদি পাঠানো যায়।

ওয়েবঃ ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত কম্পিউটার গুলোতে যে তথ্য রাখা আছে, সেগুলো ব্যবহার করার ব্যবস্থা বা পদ্ধতিকে ওয়েব বলে।

নেট নিউজঃ এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইন্টারনেটে তথ্যভান্ডারে সংরক্ষিত সংবাদ যে কোন সময় উন্মুক্ত করা যায়।

চ্যাটঃ একাধিক ব্যক্তির সাথে একই সময়ে এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কথা বলা যায় বা আড্ডা দেওয়া যায়।

আর্কিঃ আর কি কাজ হচ্ছে তথ্য সমূহকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সুচি আকারে উপস্থাপন করা। 

ইউজ নেটঃ অনেকগুলো সার্ভারে নিজস্ব সংবাদ নিয়ে গঠিত তথ্যভাণ্ডার, যা সর্বসাধনের জন্য উন্মুক্ত।
 
গোফারঃ তথ্য খুঁজে দেয়ার একটি পদ্ধতি যার সাহায্যে গুরুত্বানুযায়ী তথ্যের সমন্বয় সাধিত হয়।
 
ই-ক্যাশঃ ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে E-Cash পদ্ধতি বলা হয়। আসলে E-Cash অনেকগুলো আধুনিক অর্থনৈতিক লেনদেনের সমষ্টি।

ইন্টারনেট আবিষ্কারের উপকারিতা

ইন্টারনেট আবিষ্কারের ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি যে ইন্টারনেট খুব উপকারি। তবে আমাদের দেশে উপকারের বদলে অপকার বেশি করে হয়। কেনোনা আমাদের দেশের মানুষ বিশেষ করে যবুক শ্রেণির ছেলে-মেয়ে এই ইন্টারনেটের অপব্যবহার করে। প্রায় এ শ্রেণির ছেলে-মেয়ে গুলো অশ্লীল কাজ বেশি করে।
 
ইন্টারনেট আবিষ্কারের উপকারিতা যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী বিপ্লব। এর মাধ্যমে অতি দ্রুত পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে খবর আদান প্রদান করা যায়। বিশ্বের এক প্রান্তে বসে অপর প্রান্তের মানুষের সাথে জমিয়ে আড্ডা দেওয়া যায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, খেলাধুলার ক্ষেত্রেও এটির অবদান রেখে চলেছে।

ইন্টারনেট আবিষ্কারের অপকারিতা

ইন্টারনেট আবিষ্কারের অপকারিতা রয়েছে অনেক। ইন্টারনেটের মাধ্যমে অসৎ ব্যক্তি ভুল তথ্য প্রদান করে, পর্ণো ছবি প্রদর্শন করে, জুয়া খেলে গোটা সমাজকে ধ্বংস করে দিতে পারে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোন স্থানে বোমা ফাটিয়ে বড় বড় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিতে পারে। তাছাড়া এর মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে সমগ্র বিশ্বের কম্পিউটার পদ্ধতির ব্যাপক ক্ষতি সাধন করতে পারে।

বর্তমানে বাচ্চারা মোবাইল ফোনে এই ইন্টারনেট ব্যবহার করে কার্টুনের প্রতি মনোযোগী হওয়ায় লেখাপড়ার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। বিশেষ করে এ ঘটনা বাংলাদেশে বেশি ঘটে থাকে। ফলে এ দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের উচিত বাচ্চাদেরকে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার থেকে প্রতিহত করা।  

শেষ কথা ইন্টারনেট আবিষ্কারের ইতিহাস 

পরিশেষে বলা যায় যে ইন্টারনেটের যেমন উপকারিতা আছে তেমনি এর অনেক অপকারিতাও আছে। ইন্টারনেট মানুষের জীবনকে দ্রুত ও সহজ করলেও অনেক মানুষকে এটি ক্ষতিও করেছে। সমগ্র বিশ্বে ইন্টারনেট আজ অসম্ভবকে সম্ভব করছে।

জীবনযাত্রা মান উন্নত থেকে অন্যতর করছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ওপর নির্ভর করে এর অপকারিতা উপকারিতা। তবে এক কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে সমগ্র বিশ্ব একটি পরিবার অন্তর্ভুক্ত করতে হলে ইন্টারনেটের বিকল্প নেই। 


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জিনেউস আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url