মাথায় উকুন হলে করণীয় কি
মাথায় উকুন হলে করণীয় কি এই আর্টিকেলে আপনারা বিস্তারিত জানতে পারবেন। উকুন সাধারণত মেয়েদের মাথায় হয়ে থাকে। তবে অনেক ছেলেদের মাথায় উকুন দেখা যায়। উকুন মাথায় থাকলে নানা রকম সমস্যা হতে পারে।
মাথায় উকুন হলে আপনাকে সহজ কিছু কাজ করতে হবে, তাহলে মাথার উকুন একবারে শেষ হয়ে যাবে। মাথার উকুন কিভাবে চিরতরে শেষ করবেন তা এই আর্টিকেলে আপনি জানতে পারবেন। তাই আর্টিকেলটি আপনারা মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
সূচিপত্রঃ মাথায় উকুন হলে করণীয় কি
- মাথায় উকুন হলে করণীয় কি
- মাথায় উকুন কেন হয়
- মাথায় উকুন কত দিন বাঁচে
- মাথায় সাদা উকুন হলে কি হয়
- উকুন চুলের কি ক্ষতি করে
- দ্রুত উকুন দূর করার উপায়
- উকুনের ডিম দূর করার উপায়
- উকুনের ডিম দূর করার ঘরোয়া উপায়
- রসুন দিয়ে উকুন দূর করার উপায়
- উকুন মারা শ্যাম্পুর নাম কি
- উকুন মারার ঔষধের নাম কি
- মাথার উকুন চিরতরে দূর করার উপায়
- মাথায় উকুন থাকার অপকারিতা
- শেষ কথা
মাথায় উকুন হলে করণীয় কি
মাথায় উকুন হলে করণীয় কিছু কাজ রয়েছে। যেগুলো করলে খুব সহজে মাথার উকুন তাড়ানো সম্ভব। মাথায় উকুন বিভিন্ন ভাবে হতে পারে। তবে মূলত মাথায় উকুন হয় মাথার ময়লার কারণে। এছাড়া একজনের মাথা থেকে অন্যজনের মাথায় উকুন যায়। উকুন কোন মাথার রোগ নয়, কিন্তু উকুন মাথার ক্ষতি করে থাকে। কেনোনা উকুন মাথার রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে।
মাথার উকুন থেকে বাঁচতে হলে আপনাকে বেশ কিছু কাজ করতে হবে। এগুলো মানলে আপনার মাথার চুলে উকুন থাকবেনা। কাজগুলো অবশ্যই কঠিন নয়।কাজ গুলো আপনি ঘরে বসেই করতে পারেন। একটু সময় নিয়ে কাজ গুলো করলে মাথার উকুন এড়ানো সম্ভব। তাই আপনি অবশ্যই এই আর্টিকেলটি ভালো ভাবে পড়বেন বলে আমি আশা করছি।
মাথায় উকুন কেন হয়
মাথায় উকুন কেন হয় জানতে হলে আপনি এটা বিস্তারিত পড়ুন। উকুন মাথার সাধারণ সমস্যা হলেও মাথায় উকুন হলে করণীয় সম্পর্কে আপনার জানা উচিত। সাধারণত মাথায় উকুন হয় অপরিষ্কার ও খুশকির কারণে। যাদের চুল ঘন ও অপরিষ্কার তাদের চুলে উকুনের প্রাদুর্ভাব বেশি ঘটে। উকুন সাধারনত তিন ধরনের হয়ে থাকে।
মাথার চুলে যে উকুনটি হয় সে উকুনটিকে বলা হয় পেডিকিউলাস ক্যাপিটিস। শরীরে যে উকুনটি দেখা দেয় সেই উকুনটিকে বলা হয় পেডিকিউলাস করপোরিস। বিটপ দেশের লোমে, বগলে, গোঁফ বা দাড়িতে ও চোখের পাতার উকুনকে পেডিকিউলাস পিউবিস বলে। উকুন সাধারণত একজনের মাথা থেকে অন্যজনের মাথায় যায়।
মাথায় উকুন কত দিন বাঁচে
মাথায় উকুন কত দিন বাঁচে এখানে আমরা জানতে পারবো মাথার উকুন বাঁচা ও এর ডিম সম্পর্কে। মাথায় উকুন সাধারণত ১০০ টি ডিম পারে। এই ডিম চুলের গোড়া থেকে একটু উপরে থাকে। ওখান থেকেই ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। উকুন তাড়াতাড়ি না পরিষ্কার করতে পারলে মাথায় অনেক চুলকানি হয়। যা পরবর্তীতে এলার্জি হতে পারে।
মাথায় উকুন ৩০ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। এই উকুন বেঁচে থাকার জন্য মাথার রক্ত খেয়ে থাকে। যখন এই প্রাপ্তবয়স্ক উকুন মাথার রক্ত খায় তখন মাথা কামড়ায়। ফলে ধীরে ধীরে চুলকানির রুপ নেয়। এতে করে মাথার অনেক সমস্যা হতে পারে। তাই তাড়াতাড়ি উকুন সমস্যা সমাধান করা উচিত।
মাথায় সাদা উকুন হলে কি হয়
মাথায় সাদা উকুন হলে কি হয় তা জানুন এই আর্টিকেলে। অনেক চুলকানি হয় মাথায় সাদা উকুন হলে।
এই উকুন মাথায় লক্ষ্য করা যায়না। ফলে এই উকুন কামড়ালে শুধু চুলকানি হয় এবং পরে তা বিভিন্ন রোগে পরিণত হতে পারে। কেনোনা যেখানে চুলকায় সেখানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। আর এই ক্ষত থেকেই রোগের সৃষ্টি হতে পারে।
ক্ষত থেকেই সেখানে জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে। সংক্রমিত স্থানে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব হতে পারে। এই উকুন মেয়েদের ঘন চুলে বেশি দেখা যায়। ছোট বয়সে যারা চুল রাখে আর যত্ন কম নেওয়া হয় তাদের বিশেষ করে এই সাদা উকুন দেখা যায়। এই উকুন শুধু মানুষের হয় না, পশু-পাখি ও প্রাণির ও হয়।
উকুন চুলের কি ক্ষতি করে
উকুন চুলের নানাবিধ ক্ষতি করে। উকুন শুধু যে চুলের ক্ষতি করে তা নয় বরং এটা মাথারও অনেক ক্ষতি করে থাকে। তবে চুলের নানা ভাবে ক্ষতি করে থাকে। যেমন চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে পড়া। এর কারণে চুল পরে। চুলের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়। চুল স্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পায়না। চুলের ডগা বা আগা নষ্ট হয়ে যায়। চুল উস্কো-খুস্কো হয়ে যায়।
চুলের পাশাপাশি মাথারও অনেক ক্ষতি সাধন করে থাকে। উকুন কামড়ানোর কারণে অনেক চুলকানি হয়। ফলে এক সময় চুলকানোর স্থানে ঘা হয়, এবং সেখান থেকে জীবাণু আক্রমণ করে নানা রোগ সংক্রমিত করে। তাই মাথায় উকুন হলে করণীয় হচ্ছে আমাদের তাড়াতাড়ি এর অপসারণের ব্যবস্থা নেওয়া। যেন উকুন কোনোভাবে চুল ও মাথার ক্ষতি না করতে পারে।
দ্রুত উকুন দূর করার উপায়
দ্রুত উকুন দূর করার উপায় হচ্ছে চুল সবসময় যত্ন সহকারে রাখা। দ্রুত উকুন দূর করতে হলে আমাদের কিছু প্রয়োজনীয় টিপস গ্রহণ করতে হবে। টিপস গুলো সঠিকভাবে গ্রহণ করলে খুব দ্রুত উকুন দূর করা যায়। মাথার উকুন একটি সাধারন সমস্যা হলেও এটি অনেক রোগ জীবাণু ছড়াতে পারে।এমনকি বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটাতে পারে।
দ্রুত উকুন দূর করতে হলে ভিনেগার ব্যবহার করতে হবে, কেননা ভিনেগারে থাকে এসিটিক অ্যাসিড যা খুব দ্রুত উকুন দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া ট্রি ট্রি ওয়েল উকুন দূর করতে সাহায্য করে অলিভ অয়েলের সাথে এই ট্রি ট্রি অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করলে মাথায় উকুন দ্রুত কমে যায়। এই অয়েলটি সাধারণত তুলো দিয়ে মাথার তালুতে মেসেজ করে দিতে হবে।
উকুনের ডিম দূর করার উপায়
উকুনের ডিম দূর করার উপায় অনেক সহজ। মাথায় উকুন হলে করণীয় এ বিষয়ে অনেক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন রাত্রিবেলায় চুলে মেয়নেজ ভালোভাবে মাথার ত্বকে দিয়ে ক্যাপ পড়ে সারারাত ঢেকে থাকলে পরের দিন সকালে উকুন গুলো শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায়। সকালে ভালোমতো চুল চিরুনি করলে উকুন ও ডিম পরে যায়, এক্ষেত্রে চুল থেকে উকুন ও উকুনের ডিম বের করতে এক বিশেষ ধরনের চিরুনি ব্যবহার করা হয়।
এ বিশেষ ধরনের চিরুনির নাম 'নিট কম্ব' এই চিরুনি ব্যবহার করলে মৃত উকুন ও ডিম দূর হয়ে যাবে।এভাবে আপনি খুব সহজেই উকুনের ডিম দূর করতে পারেন। এটা কোন জটিল বিষয় নয়। তাই যার মাথায় এরকম উকুনের সমস্যা, আপনারা এই পদ্ধতিটি ভালোভাবে স্মরণ করুন। তাহলে আমি মনে করি যে আপনার মাথার উকুন খুব তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে।
উকুনের ডিম দূর করার ঘরোয়া উপায়
উকুনের ডিম দূর করার ঘরোয়া উপায়ে আপনি জানতে পারবেন কিভাবে ঘরে বসেই দ্রুত উকুনের ডিম দূর করা যায় মাথা থেকে। নিমের পাতার রস মাথায় লাগিয়ে ১০ থেকে ২০ মিনিট বসে থাকুন এরপর ভালো করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এভাবে তিন দিন পর পর মোট চার দিন করবেন তাহলে দেখবেন আপনার মাথার উকুন বা উকুনের ডিম একবারে শেষ হয়ে গেছে।
এছাড়া আপনি ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন কেননা ভিনেগারে আইসিটিক অ্যাসিড থাকার কারণে খুব সহজে উকুনের ডিম মরে যায়। তাছাড়া বাদামের তেল দিয়ে সারারাত ঘুমিয়ে থাকলে আর পরের দিন সকালে চুল চিরুনি দিয়ে আচড়ালে উকুনের ডিম শেষ হয়ে যায়। কেননা বাদামের তেল উকুন ও উকুনের ডিম সহ্য করতে পারে না। হলে তারা খুব সহজেই মারা যায়। এভাবে আপনি উকুনের ডিম ঘরে বসেই খুব সহজে দূর করতে পারেন।
রসুন দিয়ে উকুন দূর করার উপায়
রসুন দিয়ে উকুন দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই। ঘরোয়া ভাবেই রসুন দিয়ে উকুন দূর করা যায়। তবে রসুন দিয়ে উকুন দূর করতে হলে আপনাকে আগে অবশ্যই এর তীব্র গন্ধ সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে। কেননা যখন রসুন বেটে পেস্ট করে মাথায় লাগাবেন তখন কয়েক ঘন্টা মাথাতে এই পেস্টি থাকতে হবে ফলে এর তীব্র গন্ধ আপনাকে সহ্য করার ক্ষমতা থাকতে হবে।
প্রথমেই ৮ থেকে ১০ টি রসুনের কোয়া নিতে হবে। এরপর রসুনের কুয়াগুলো থেকে খোসা ছড়িয়ে ভালো ভাবে পেস্ট করে নিতে হবে। পেস্ট করা হয়ে গেলে এর সাথে দুই চামচ লেবুর রস দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর মাথার চুলের গোড়ালি থেকে আগা পর্যন্ত সুন্দরভাবে দিতে হবে। এরপর এটি আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা এভাবে রাখুন তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন দেখবেন আপনার মাথায় আরো কোন উকুন নেই।
উকুন মারা শ্যাম্পুর নাম কি
উকুন মারা শ্যাম্পুর নাম আসলে উকুন মারার শ্যাম্পু তেমন একটা ব্যবহার হয় না। তবে একটি শ্যাম্পুর ব্যবহার দেখা যায় সেটা হচ্ছে ইংলিশ উকুন নাশক শ্যাম্পু 125 ml পাওয়া যায়। এটা ব্যবহার করার মাধ্যমে উকুন মরে। এটা বাংলাদেশে ১০৫ টাকা নিতে পারে। এই শ্যাম্পু দেয়ার আগে মাথার চুল আগে ভিজিয়ে নিতে হবে তারপর ভালোভাবে সমস্ত চুলে এই শ্যাম্পু ব্যবহার করে ধুয়ে ফেলতে হবে তাহলেই দেখা যাবে মাথায় আর উকুন নেই।
উকুন মারার ঔষধের নাম কি
উকুন মারার ঔষধের নাম হচ্ছে এলাইস ০.৫ % লোশন( Alice 0.5% lotion)। এই ওষুধটি মূলত ফার্মেসির যেকোনো দোকানে পাবেন। বর্তমানে ওষুধটি মাথার উকুন মারার জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই যদি কেউ খুব দ্রুততার সাথে মাথার উকুন মারতে চান তাহলে অবশ্যই ওষুধটি ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এই লোশনটিতে ( Ivermectin BP 0.5 % Topical Anti-lice preparation) আছে।
মাথার উকুন চিরতরে দূর করার উপায়
মাথার উকুন চিরতরে দূর করার উপায় এতক্ষণ ধরে আমরা জানতে পারলাম বিভিন্ন উপায়ে কিভাবে উকুন মারা যায়।অনেকগুলো পদ্ধতি আপনাদের মাঝে তুলে ধরলাম। কোন শ্যাম্পু কোন ঔষধ এমনকি ঘরোয়া টিপস গুলো আপনাদের কাছে শেয়ার করলাম। আশা করি এগুলো সবকিছুই আপনাদের ভালো লেগেছে।
আপনি যদি আপনার মাথায় আর কোনদিন যেন উকুন না হয় এমন কিছু ভাবনা করে থাকেন তাহলে এ বিষয়টি আপনার জন্য। মাথার উকুন চিরতরে দূর হয়ে যাবে। আপনি যদি ঘরোয়া টিপস গুলো ফলো করেন। প্রথম চারদিন অলিভয়েলের সাথে ভিনেগার মিশিয়ে চুলে দিলে উকুন চিরতরে বিদায় হবে।এরপর নিম পাতার রস তারপরে চার দিন দিলে উকুন চিরতরে বিদায় নিবে।
মাথায় উকুন থাকার অপকারিতা
মাথায় উকুন থাকার অপকারিতা অনেক। এর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য অপকারিতা রয়েছে। মাথায় উকুন থাকলে যে শুধু চুলের বা মাথার যে ক্ষতি হয় তা নয়, বরং যার মাথায় অত্যাধিক উকুন থাকে তার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে।কিভাবে ঘটে তা আসলেই জানার বিষয়। যখন মাথায় অতিরিক্ত উকুন হয় তখন ওই ব্যক্তি মাথার চুলকানির জন্য ঘুমোতে পারে না। ফলে তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে।
উকুন থাকার ফলে মাথার চুলকানির কারণে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে মানসিকভাবে একটি মানুষ দুর্বল হয়ে পড়ে। ফল এভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। চুলে উকুন হলে মাথার সমস্যা তো হয়। এ সমস্যা যদি তাড়াতাড়ি নিরাময় না করা হয়, তাহলে মাথার ত্বকের বড় ধরনের সমস্যা হয়। তাই আমাদের উচিত মাথার চুলের উকুন তাড়াতাড়ি নিরাময় করা।
শেষ কথা
মাথায় উকুন হলে করণীয় শেষ কথায় আপনাদের বলতে চাই অবশ্যই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ে আপনি উপকৃত হন। তাহলে আমার লেখাটি সার্থক হবে বলে আমি আশা করছি। তবে একটি বিষয় মনে রাখতে হবে ছোট বাচ্চাদের থেকে প্রাপ্তবয়স্কদের সঠিকভাবে চুলের যত্ন নিতে হবে।
কারণ চুলের যত্ন ভালোভাবে নিলে চুলের উকুন হয় না। যার মাথায় উকুন রয়েছে তার কাছ থেকে এড়িয়ে চলা অনেক ভালো। কেননা উকুন অন্যজনার মাথা থেকেই বেশিরভাগ আসে। মাথার উকুনে যদি আপনার বড় ধরনের কোন সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।
জিনেউস আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url