একটি শীতের সকাল-শীতের আগমনী বার্তা

একটি শীতের সকাল দারুণ এক আবহাওয়ার গল্প। এই সকালে এক অন্য রকম অনুভব কাজ করে শরীরের মধ্যে। এ সময় বাংলা যেন নতুন রুপে সাজে। বাংলার এই রুপ যেন এক অন্যন্য ইতিহাস গড়ে তুলেছে। 
একটি-শীতের-সকাল-শীতের-আগমনী-বার্তা

শীতের এই অভাবনীয় সৌন্দর্য ফুটে সারা বাংলায়। শীতকাল নানান সবজি থেকে শুরু করে হরেক রকমের পিঠা-পুলির উৎসব যেন এক মহনীয় বিষয়। এ সময় প্রকৃতির যে রুপ তা অবশ্যই এক কথায় অসাধারণ।

সূচিপত্রঃ একটি শীতের সকাল-শীতের আগমনী বার্তা

একটি শীতের সকাল

একটি শীতের সকাল যেন এক অবিরাম ভালোবাসার গল্প। শীতের সকালের অনুভূতি বলার মতো কোনো ভাষা খুজে পাওয়া যায়না। এ দেশে শীতের সকাল একটু ভিন্ন রকম। কখনও কখনও কোথাও সূর্য দেখা যায়না। আবার কোথাও সূর্য উকি মারে। এ দেশে শীত মূলত দুই মাস থাকে,কিন্তু শীতের আগমনটা একাটু আগেই হয়ে থাকে।

সাধারণত হেমন্তের পরে আসে শীতকাল। বাংলায় পৌষ আর মাঘ মাস নিয়ে শীত বুঝায়। আসলে হেমন্তের শুরুতে শীত পরতে শুরু করে। পৌষ আর মাঘ মাসে শীতের তীব্রতা শুরু হয়। হেমন্তের পর পৌষ ও মাঘ মাসে স্বকীয় বৈশিষ্ট্য এবং আলাদা সৌন্দর্য নিয়ে আসে শীতকাল। কবির ভাষায়- 
                                  পৌষ পার্বনে পিটা খেতে বসে খুশিতে বিষম খেয়ে
                                  আরো উল্লাস বাড়িয়েছে মনে মায়ের বকুনি খেয়ে।

শীতের আগমনী বার্তা

শীতের আগমনী বার্তা পূর্ব দিকে তখনো আলোর রেখা পুরো পুরো ফুটে ওঠেনি, অথচ বনে বনে পাখিদের হৃদয় তার গোপন সংবাদ সবার অলক্ষে ছুড়ে পড়ে। এখনই সব দিকে রাখালের বেশে আরবিভূত হবে সকাল, স্নিগ্ধ শীতের সকাল। তাকে স্বাগত জানাতে বনে বনে পাখির কন্ঠে উঠেছে মধুর আহ্বান-গীতি। কুয়াশা জড়িত বনভূমি প্লাবিত করে তাদের গানের সুর-লহরী ছড়িয়ে পড়লো দিক-দিগন্তে।

অল্প সময়ের মধ্যেই কুয়াশার ধুম্রজাল ছিন্নভিন্ন করে আমাদের দ্বারে এসে দাঁড়াবে আলো ঝলমলে একটি সুন্দর সকাল। এভাবেই নিয়ে আসে শীতের আগমনী বার্তা। শীতের এই আগমনী বার্তা শীতকে এক অন্যরকম অপরূপভাবে সাজিয়েছে। এই অপরূপ সৌন্দর্য শীতের আগমনকে নতুন বার্তা রূপে মানুষের মাঝে ও প্রকৃতির মাঝে বিলিয়ে দিয়েছে।

শীতের সকালের বৈশিষ্ট্য

শীতের সকালের বৈশিষ্ট্য একটু অন্যরকম। এ সময় শীত এক অন্যরূপে সাজে। এদেশে শীত ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।সাধারণত শীত শুরু হয় আশ্বিন মাসের শেষে থেকে এবং শেষ হয় চৈত্র মাসে গিয়ে।শীতের তীব্রতায় মানুষ, পশুপাখি আরষ্ট হয়ে পড়ে। লেপকাথা কম্বলের মোহ কাটিয়ে কেউ বাহির হতে আসতে চায় না।

তাই শীতের সকালের যে একটি মায়াময় রূপ আছে, তা দেখার সৌভাগ্য সচরাচর কারো ভাগ্যে ঘটে না। তারপর বেলা বেড়ে গেলে যখন হালকা মিষ্টি রোদ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে, তখন ঘাসের ডগার শিশির বিন্দু মুক্তোর দানার মত ঝলমল করতে থাকে। এই সৌন্দর্য যেন অকল্পনীয়। এই সৌন্দর্যের অনুভূতি যেন কোনো ভাষা খুঁজে পাই না।

সূর্যদয়ের পূর্বের শীতের সকাল

সূর্যোদয়ের পূর্বে শীতের সকালটি এক অন্যরকম আবহাওয়া বয়ে নিয়ে আসে। সূর্য ওঠার পূর্বে একটি শীতের সকাল যেন প্রকৃতির এক রূপ সৌন্দর্যের মহিমা। লেপের তলা থেকে উঠে উঠি করেও উঠতে ইচ্ছে হয় না। শিউরে হিংস্র শীত কেশর ফুলিয়ে থাবা পেতে বসে আছে। গরম বিছানায় রচিত উত্তাপ ছেড়ে উঠতে গেলে কেমন এক দুর্নিবার অলস্য সমস্ত চেচনাকে ঘিরে ধরে।
একটি-শীতের-সকাল-শীতের-আগমনী-বার্তা
কর্মের আহ্বান সত্ত্বেও এক সুন্দর জড়তায় মানুষ আরামের শয্যায় পড়ে থাকে। যেন এই বিছানা ছেড়ে উঠতেই মন চায় না। মন চায় আরেকটু ঘুম পারি, এইতো কেবল সকালের শুরু আরেকটু ঘুমালে কি এমন ক্ষতি হবে। এমন চিন্তা ধারা ভেদ করে কর্মের জন্য মানুষকে বেরিয়ে আসতে হয়।

শীতের সকালের আগমন

শীতের সকালের আগমন একটু অন্যরকম অনুভূতি বয়ে নিয়ে আনে। এ সময় প্রকৃতির সৌন্দর্য মানুষের কর্মব্যস্ততা প্রকৃতির এক অনন্য ইতিহাস মাখা চিত্র ফুটে তুলে। শীতের রাত থাকে কুয়াশাচ্ছন্ন। ভোররাতে বৃষ্টি বিন্দুর মত শিশির পাত হয়। এ যেন এক রাতের কান্না। সকালের আগমনে এ কান্না যেন থামতে চায় না।

শীতের সকালে আগমন একটু ভিন্ন হলেও এর ভালোলাগা অনেক বেশি। এ সময় প্রতিটি মানুষ একটু অন্যরকম অনুভূতি প্রকাশ করে। শীতের সকালেই গরম কিছু খাওয়া দাওয়া একটি ভালোলাগার উদাহরণ। এ সময় পিঠার এক আমেজ উৎসব পালিত হয়।

শীতের সকালের রুপ

শীতের সকালের রুপ এক অনন্য ইতিহাস তুলে ধরে। পূর্ব দিকে ধীরে ধীরে আলো ফুটতে থাকে। উত্তর দিক থেকে হিমগর্ভ ঠান্ডা বাতাস একটি দীর্ঘশ্বাসের মতো হঠাৎ শির শির করে বনের গাছগুলোর পাতার ফাক দিয়ে বয়ে যায়। পাতাগুলো সহসা কেঁপে ওঠে। টুপটুক করে শিশির ঝরে পড়ে। বনের পথ শিশির সিক্ত হয়ে যায়।

টিনের চালে এবং ঘাসে ঘাসে শিশিরের বিন্দু জমে ভোরের আলোয় ঝলমল করতে থাকে। দূরে কোথাও খেজুর রস জাল দেওয়া হচ্ছে এমনটা দেখা যায়। বাতাসে তার লোভনীয় মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসে। জাল দেওয়া খেজুরের রসের গন্ধ বাতাসে মৌ করে। গ্রামের কৃষকরা বলদাকে মাঠের দিকে চলে। দূরে কোন মাদ্রাসার ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা উচিত কোরআন তেলাওয়াত করে। 

এই সুললিত সুরে সকালের মধুর ব্যঞ্জনার মধ্যে বিছানায় পড়ে পড়ে গভীর অবশ্যই তন্দ্রা সুখ উপভোগ করা উচিত নয়। তাই অগত্যা গায়ের লেপ সরিয়ে রেখে বিছানা থেকে বের হবার জন্য সচেষ্ট হতে হবে। এরূপ সৌন্দর্যকে উপভোগ করতে হবে।একটি ভালো জিনিস থেকে নইলে আমরা বিচ্যুত হবো।

শীতের সকালের বৈরাগ্য মূর্তি

শীতের সকালের বৈরাগ্য মূর্তি ফুটে উঠে। ততক্ষণ বাইরের পৃথিবীর ঘুম ভেঙ্গেছে। দিকে দিকে কর্মের মুখরতায় শীতের সকাল কর্মব্যস্ত হয়ে উঠে। পূর্ব দিগন্তে আলো ছড়িয়ে সূর্যের রথ আকাশে পরিক্রমায় বের হয়ে পড়ে। একটি নীলকন্ঠ পাখি রিক্ত পত্র বাবলার ডালে বসে রোদ পোহায়। এক জোড়া নাম না জানা পাখি ডানায় বাতাস ফাটিয়ে কুয়াশার ভেতর দিয়ে কোন এক অজানার পানি ছোটে।
একটি-শীতের-সকাল-শীতের-আগমনী-বার্তা
শীতের সকাল যেন এক পোড়া কুলোবধু। তার মুখখানি দিগন্তে বিস্তৃত কুয়াশার অবগণ্ঠনে ঢাকা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতের সকাল ও তার কুয়াশার অবগুন্ঠন ধীরে ধীরে খুলতে থাকে। এভাবেই শীতের সকালের বৈরাগ্য মূর্তি ফুটে ওঠে।

শীতের সকালের রুপ বদল

শীতের সকালের রুপ বদল হয় ধীরে ধীরে। ধীরে ধীরে বেলা বাড়তে থাকে। শীতের সূর্য পূর্ব দিগন্তের কুয়াশার জাল ছিন্ন-ভিন্ন করে এক গভীর আলস্যে উপরে উঠতে থাকে। তার কিরণ বানে পরজদস্ত হয় শীতের তীব্রতা। সোনালী রোদ চারিদিক ভেসে যায়। সেই রোদের স্পর্শে শীতের সকাল যেন বিন্দু বিন্দু শিশিরের মত টলমল করে কাপতে থাকে।

এই রুপ বদল যেন এক অন্যরকম সৌন্দর্যের ইতিহাস। ধীরে ধীরে বেলা বাড়ার সাথে সাথে ইতিহাসের পাতা যেন মুসরে দুমড়ে পড়ে যায়। এক অসীম ভালোবাসা নিয়ে বিদায় নেয় একটি শীতের সকাল। ধীরে ধীরে এই রূপ বদলানো যেন সৌন্দর্যের বড় এক মহিমা।

শীতের সকাল ত্যাগের মূর্তি

শীতের সকাল ত্যাগের এক মূর্ত প্রতীক। শীতের সকালের হাতে যেন বৈরাগিনির একতারা। সে তার এক তারা নিঃসঙ্গ তাকে আঘাত আহ হানে নির্মমভাবে। তার দলে বনের শুষ্ক বিবরণ পাতাগুলো একে একে ঝরে পড়ে। উত্তরের হিম গর্ব হওয়া তাদের দুই হাতে লুফে নিয়ে অবলীলায় উড়িয়ে দেয়। এ এক অন্যরকম চিত্র।

এই ত্যাগ যেন বহুকালের ইতিহাসের সৌন্দর্য। একটি আবহাওয়া থেকে আরেকটি আবহাওয়ার এভাবে রদবদল হয়, কিন্তু শীতের সকালটি রৌদ্র ওঠার সাথে সাথে যেন বিলীন হয়ে যায়। মনে হয় যেন রৌদ্রের কাছে তার সকল কিছু ত্যাগ করে চলে যায়। হ্যাঁ এটিই তো একটি শীতের সকাল।

শীতের সকালে গ্রামের দৃশ্য

শীতের সকালে গ্রামের দৃশ্য শহরের দৃশ্য থেকে খুবই সৌন্দর্যপূর্ণ। গ্রামের অনাহারে অর্ধাহারেক্লিষ্ট কৃষকের শীতের তীব্রতা অপেক্ষা করে রুগুন বলদ আর নাঙ্গল নিয়ে মাঠের দিকে অগ্রসর হয়। কোথাও আগুন প্রহাবার দৃশ্য চোখে পড়ে। আবার কোথাও বা মটরশুটি পুড়িয়ে খাওয়ার দৃশ্য দেখা যায়। এই দৃশ্য শীতের গ্রামকে প্রকৃতি যেন ঢেকে রাখে। 

কৃষানীরা ধান মাড়ায়, ধান সেদ্ধ অথবা সবজির বাগানে পানি ছিটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। শীতের সকাল আসে গ্রামের দরিদ্র লোকের ঘরে অভিশাপ হয়ে। তাদের শীত বস্থের অভাবে। বিছানা, বালিশ, লেপ, কাথার অভাবে তারা ঘুমাতে পারে না। তবে এত কিছুর মধ্যেও গ্রামের মানুষেরা অনেক ভালো দিন কাটাই। এ সময় গ্রামে দেখা যায় নানা ধরনের পিঠা-পুলির উৎসব।

শীতের সকালে শহরের দৃশ্য

শহরে শীতের সকাল গুলোর মূর্তি ভিন্ন রূপ। ভোরে কাকে ডাকে শহরের শীতের সকালের ঘুম ভাঙ্গে।  যেখানে শিশির পরে কিন্তু তাতে সবুজ ঘাসের করুন গভীর ঘ্রাণ মিশে থাকে না। সেখানে উত্তরের শীতল হাওয়া বয়ে আসে কিন্তু তাতে খেজুরের রস কিংবা পাকা ধানের মৌমু গন্ধ হৃদয়কে আলোড়িত করে না। শহরের শীতের সকাল কেবল কাকের ডাক, কলের পানির শব্দ, কেরোসিন-কয়লার গন্ধ ও বাস ট্রাকের ঝনঝনানি নিয়ে আসে।

এক কথায় শহরের ইট কাঠ পাথরের কৃত্রিম-কাঠিন্যের মধ্যে গ্রাম বাংলার উদাস করুন শীতের সকালের স্নিগ্ধ মধুর রূপটিকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। সকালের জন্য রাস্তায় গাড়ি চলাচল করে হেডলাইট জ্বালিয়ে। রিক্সাগুলো যাত্রী নিয়ে মন্তর গতিতে বেল বাজাতে ছুটে যায়। রাস্তার মোড়ে চায়ের দোকানে ভিড় জমে উঠে।

শীতের সকালের উপভোগ্যতা

শীতের সকালের উপভোগ্যতা এক দারুন অভিজ্ঞতার বিষয়। এ সময় অনেকভাবে উপভোগ করা যায়। তার মধ্যে গ্রামে এই উপভোগ্যটা অনেক বেশি পরিলক্ষিত হয়। এ সময় নানা ধরনের পিঠার উৎসবের কারণে সকালটা আরো উপভোগ্যতা হিসেবে ফুটে ওঠে। সকালে চাদর মুড়ি দিয়ে বের হয়ে ভাপা পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা।

শীতের সবচেয়ে উপভোগ্য লোভনীয় জিনিস হচ্ছে খেজুরের রস। নতুন ধারের নবান্ন এবং চিড়া, মুড়ি, পিঠা, পায়েসের ঘ্রাণে চারিদিক আমদিত হয়। হরেক রকমের পিঠা যেন এক নতুন ভালোবাসা বয়ে নিয়ে আসে। এ সময় পিঠা খাওয়ার ধুম পড়ে।গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে পিঠা খাওয়ার এক আনন্দ উৎসব ফোটে ওঠে।

শেষ কথা

পরিশেষে বলাই যায় একটি শীতের সকাল শীতের আগমনী বার্তার এক অনাবিল হাস্যমুখর দিন। শীতের মিষ্টি রোদ, অপরূপ মাধুর্য ও বিবিধ বৈশিষ্ট্যের জন্য শাশ্বতকাল ধরে এদেশের ভাবুকচিত্তকে উদাস করে আসছে। 

তাই তো অনেকের ধারণা, 'শীতের সকাল-বৈরাগ্যের নয়, ভোগের এবং উপভোগের।' শীতের সকালের প্রধান আকর্ষণ খেজুরের রস ভাপা পিঠা পুলি পিঠা। এগুলো যেন শীতের সকালকে ও শীতের আগমনকে আরো ফুটে তুলে।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জিনেউস আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url