সাওমের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
সাওমের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক। ইসলামের পাঁচটি রুকনের মধ্যে সাওম একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।আল্লাহ পাক সাওম পালনকারীকে অনেক ভালবেসে থাকেন। যে ব্যক্তি নেক নেয়াতের সাথে সাওম পালন করে আল্লাহ তাকে অনেক ভালোবাসেন।
সূচিপত্রঃ সাওমের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
- সাওমের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
- সাওমের পরিচয়
- সাওমের উদ্দেশ্য
- সাওমের ফজিলত
- সাওমের প্রকারভেদ
- সাওমের সাহরি বা সেহরি
- সাওমের ইফতার
- সাওম ভঙ্গের কারণ
- সাওম মাকরুহ হওয়ার কারণ
- সাওমের কাজা ও কাফফারা
- সাওমের ইতিকাফ
- সাওমের সাদাকাতুল ফিতর
- শেষ কথা
সাওমের গুরুত্ব ও তাৎপর্য
মুসলমানদের ওপর রমজান মাসের সাওম পালন করা ফরজ। আল্লাহ তা'আলা বলেন-"হে ঈমানদারগণ তোমাদের উপর সাওম ফরজ করা হলো।" (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৩) সাওম পালন করা ফরজ। যে এটা অস্বীকার করবে সে কাফির হবে।বিনা ওজরে কেউ পালন না করলে সে ফাসিক ও গুনাহগার হবে। সাওম প্রত্যেক শরীয়তে ফরজ ছিল।
পূর্ববর্তী সকল উম্মতের জন্য তা ছিল অপরিহার্য ইবাদত। কুরআনুল কারিমের আছে- "যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতগণের ওপর।" (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৩) সাওমের গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে নবী কারীম সাঃ বলেন- "যে ব্যক্তি কোন ওজর বা রোগ ব্যতীত রমজানের একটি সাওম ছেড়ে দেবে, সে যদি সারা জীবন ধরে সাওম পালন করে তবুও তার ক্ষতিপূরণ হবে না।" (তিরমিজি ও আবু দাউদ)
সাওম পালন করলে মানুষ পরস্পরে সহানুভূতিশীল হয়। ধনীরা গরিবের অর্ধাহারে-অনাহারে জীবন-যাপনের কষ্ট অনুধাবন করতে পারে। ফলে তারা দান খয়রাতে উৎসাহিত হয়। সাওম পালনের মাধ্যমে হিংসে বিদ্বেষ, পরনিন্দা, ধূমপানে আসক্তি ইত্যাদি বদ অভ্যাস ত্যাগ করার সহজ হয়। হাদিসে বর্ণিত আছে- "সাওম হচ্ছে ঢালস্বরূপ।" অর্থাৎ কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধে আত্মরক্ষার হাতিয়ার হল সাওম। সাওম পালনের মাধ্যমে পানাহারের নিয়মানুবর্তিতার অভ্যাস গড়ে ওঠে। এতে অনেক রোগ দূর হয়, স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
সাওম পরিচয়
সাওমের পরিচয়, সাওমের গুরুত্ব ও তাৎপর্য এই আর্টিকেলে তা আমরা এখন জানবো। সাওম অর্থ বিরত থাকা। শরীয়তের পরিভাষায় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সাওয়াবের আশায় নিয়াতের সাথে পানাহার ও ইন্দ্রিয় তৃপ্তি থেকে বিরত থাকার নাম সাওম। সাওম আরবি শব্দ। এর মর্ম হচ্ছে সকল কিছু পানাহার থেকে বিরত থাকা।
আরবি রমজান মাসে এই সাওম পালন করা হয়। বাংলাদেশে সাওমকে রোজা বলে ডাকা হয়। এদেশের মানুষ রমজান মাসকে রোজার মাস বলে। এই সিয়াম সাধনের মাস ৩০ দিনে সমাপ্ত হয়। তবে আরবি মাস ২৯ ও৩০ দিনে হয় বিধায় রোজা ২৯ বা ৩০ টি হতে পারে। সিয়াম এই মাসে প্রত্যক মুমিনের জন্য সিয়াম পালন করা ফরজ।
সাওমের উদ্দেশ্য
সাওমের মূল উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন করা, পরহেজগার হওয়া। আল্লাহ বলেন- "যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।" (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৩) তাকওয়া মানে আল্লাহর ভয়। যার মনে আল্লাহর ভয় আছে সে কোন পাপ কাজ করতে পারে না, অন্যের ক্ষতি করতে পারে না। এই ভয়টা প্রত্যেক মুসলমানের থাকা উচিত।
সাওমের উদ্দেশ্য সফল করতে আমাদের বেশি বেশি ইবাদত করতে হবে। বেশি বেশি যখন ইবাদত করবো তখন আপনা আপনি আল্লাহর প্রতি ভয় কাজ করবে। সেই সাথে আমারা পরহেজগার হতে পারবো। রোজা রাখলে অনেক কিছুই নিয়মের ভেতরে পরে ফলে মন ও শরীর দুটোই ভালো থাকে।
সাওমের ফজিলত
সওমের ফজিলত অনেক। আল্লাহ তা'আলা বলেন- "রমজান এমন একটি মাস, যে মাসে বিশ্বমানবের পথ নির্দেশক, তাদের জীবন পথের সুস্পষ্ট বিধানসমূহ, আর হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী কুরআন নাযিল করা হয়েছে। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাসটি পাবে সে যেন এ মাসে সাওম পালন করে।" (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)
এ মাস ধৈর্যের মাস, সবরের মাস। সবরের বিনিময় হচ্ছে জান্নাত।এ মাসে মুমিনের রিযিল বাড়িয়ে দেওয়া হয়। যে ব্যাক্তি কোন সাওম পালনকারীকে ইফতার করাবে সে তার সাওমের সমান সাওয়াব পাবে। অথচ সাওম পালনকারী ব্যক্তির সাওয়াবে বিন্দুমাত্র ঘাটতি হবে না। ফজিলতের দিক থেকে রমজান মাসকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম অংশে রহমতের, দ্বিতীয় অংশ মাগফেরাতের এবং শেষ অংশ জাহান্নাম হতে মুক্তি পাওয়ার।
সাওমের প্রকারভেদ
সাওম ৬ প্রকার। ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, মুস্তাহাব, নফল ও মাক্রুহ
ফরজ সাওম
বছরে শুধু রমজান মাসের সাওম পালন করা ফরজ এবং এর অস্বীকারকারী কাফের। বিনা ওজরে এ সাওম ত্যাগকারী ফাসিক ও গুনাহগার হবে।
ওয়াজিব সাওম
মানতের সাওম ওয়াজিব। কোন নির্দিষ্ট দিনে সাওম পালনের মানত করলে সেইদিনেই পালন করা জরুরী।
সুন্নত সাওম
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম যে সকল সাওম নিজে পালন করেছেন এবং অন্যদের পালন করতে উৎসাহিত করেছেন সেগুলো সুন্নত সাওম। আশুরার ও আরাফাত দিন সাওম পালন করা সুন্নত।
মুস্তাহাব সাওম
চন্দ্র মাসের ১৩-১৪-১৫ তারিখের সাওম পালন করা মুস্তাহাব। সপ্তাহের প্রতি সম ও বৃহস্পতিবার এবং শাওয়াল মাসের ছয়টি ছাওম পালন করা মুস্তাহাব।
নফল সাওম
ফরজ ওয়াজিব সুন্নত ছাড়া মুস্তাহাব ছাড়া সকল প্রকার সাওম নফল। যে সকল দিনে সাওম পালন মাক্রুহ, ঐ সকল দিন ব্যতীত অন্য যেকোনো দিন সাওম রাখা নফল।
মাক্রুহ সাওম
মাক্রুহ তাহরীমী
যা কার্যতো হারাম। যথা- দুই ঈদের দিনে জিলহজ্জ মাসের চাঁদের ১১-১২-১৩ সাওম পালন করা।
মাক্রুহ তানযীহী
যেমন মুহাররাম মাসের ৯ বা ১১ তারিখে সাওম পালন না করে শুধুমাত্র ১০ তারিখে পালন করা।
সাওমের সাহরি বা সেহরি
সাওমের গুরুত্ব ও তাৎপর্য এই আর্টিকেলে এখন আমরা জানবো সাহরি খাওয়ার গুরুত্ব। সেহরি বা সাহরি হচ্ছে রাতের শেষ ভাগে খাওয়া হয়। এটা খাওয়া হয় মুলত সুবহি সাদিকের পূর্বে। সাওম পালনের উদ্দেশ্য সুবহি সাদিকের পূর্বে যে খাওয়া-দাওয়া করা হয় তাকে সেহরি বলে। সেহরি খাওয়া সুন্নত নবী করিম সাঃ নিজে সেহরি খেতেন এবং অন্যদের খাওয়ার তাগিদ দিতেন।
তিনি বলেছেন, "সেহরি খাওয়া বরকতের কাজ। তোমরা সেহরি খাও।" (বুখারী ও মুসলিম) যেহেতু এটা সুন্নতি কাজ সেহেতু এটা গুরুত্বের সাথে পালন করতে হবে। আমাদের সঠিক সময়ে সাহরি খেতে হবে।
সাওমের ইফতার
সূর্যাস্তের পরে নিয়াতের সাথে কিছু পানাহারের মাধ্যমে সাওম সমাপ্ত করাকে ইফতার বলে। ইফতার করা সুন্নত। এতে অনেক সাওয়াব পাওয়া যায়। ইফতার করার সময় নিমোক্ত দোয়াটি পড়তে হয়-
"হে আল্লাহ আপনার জন্য সাওম পালন করেছি এবং আপনার দেওয়া রিজিক দ্বারাই ইফতার করলাম।"
নিজে ইফতার করার সাথে সাথে অন্যকেও ইফতার করালে অনেক সাওয়াব পাওয়া যায়। নবী করীম (সাঃ) বলেন- "যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে সে রোজাদারের সমান সাওয়াব পাবে।" (বায়হাকি)
সাওম ভঙ্গের কারণ
সাওমের গুরুত্ব ও তাৎপর্য এই আর্টিকেলে এখন আপনারা জানতে পারবেন সাওম ভঙ্গের কারণ। যে সকল কারণে সাওম ভেঙ্গে যায় এবং একটির পরিবর্তে একটি সাওম পালন করা ফরজ হয়-
১- ভুল বশত কিছু খেয়ে ফেলার পর সাওম ভেঙ্গে গেছে মনে করে ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহ করলে।
২- কুলি করার সময় অনিচ্ছায় পানি পেটে চলে গেলে।
৩- সাওম পালনকারীকে জোর করে কেউ কিছু পানাহার করালে।
৪- ভুলবশত রাত এখনো বাকি আছে মনে করে সুবহি সাদিকের পর সাহরি খেলে।
৫- ইফতারের সময় হয়েছে মনে করে সূর্যাস্তের পূর্বেই ইফতার করলে।
৬- ইচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভর্তি বমি করলে।
৭- পেশাব পায়খানার রাস্তার মাধ্যমে ঔষধ বা অন্য কিছু ঢুকালে।
সাওম মাক্রুহ হওয়ার কারণ
১- অন্যের গীবত অর্থাৎ দোষত্রুটি বর্ণনা করলে।
২- মিথ্যা কথা বললে, অশ্লীল আচরণ বা গালমন্দ করলে।
৩- কুলি করার সময় গড়গড়া করলে, কারণ এতে গলার ভিতরে পানি ঢুকে গিয়ে সাওম ভঙ্গের আশঙ্কা থাকে।
৪- যথাসময়ে ইফতার না করলে।
৫- গরমবোধে বারবার গায়ে ঠান্ডা কাপড় জড়িয়ে রাখলে বা বারবার কুলি করলে।
সাওমের কাজা ও কাফফারা
কাজা
কোন কারনে অনিচ্ছায় যদি সাওম ভেঙ্গে যায় কিংবা কোন ওজরে তা পালন না করা হয় তবে একটি সাওমের পরিবর্তে একটি সাওম রাখতে হয়। একে কাজা সাওম বলে।
যে সকল কারণে সাওম কাজা করতে হয়
১- সাওম পালনকারী রমজান মাসে অসুস্থ হয়ে পড়লে বা সফরে থাকলে অথবা অন্য কোন ওজরের কারণে সাওম পালনে অপারগ হলে।
২- রাত মনে করে ভরে পানাহার করলে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে মনে করে সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতার করলে।
৩- ইচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভর্তি বমি করলে।
৪- জোরপূর্বক সাওম পালনকারীকে কেউ পানাহার করালে
৫- কুলি করার সময় অনিচ্ছায় পানি পেটে চলে গেলে।
৬- ভুল করে কোনো কিছু খেতে শুরু করার পর সাওম নষ্ট হয়ে গেছে মনে করে পুনরায় খেলে।
৭- দাঁত হতে ছোলা পরিমাণ কোন জিনিস বের করে খেলে।
কাফফারা
ইচ্ছাকৃতভাবে সাওম পালন না করলে বা সাওম রেখে বিনা কারণে ভেঙ্গে ফেললে কাজা এবং কাফফারা উভয় ফরজ হয়ে যায়।
সাওমের কাফফারা গুলো তুলে ধরা হলো-
১- একাধারে দুই মাস সাওম পালন করা।
২- এতে অক্ষম হলে ৬০ জন মিসকিনকে পরিতৃপ্তির সাথে দুই বেলা খাওয়ানো।
৩- একজন গোলামকে আজাদ করা।
একাধারে দুই মাস কাফফারা সাওম আদায়কালীন যদি মাসে দুই একদিন বাদ পড়ে যায় তবে পূর্বের সাওম বাতিল হয়ে যাবে। পুনরায় নতুন করে আবার দুই মাস সাওম পালন করতে হবে। তবে মহিলাদের ব্যাপারে কিছুটা ব্যতিক্রম রয়েছে।
সাওমের ইতিকাফ
সাওমের সাদাকাতুল ফিতর
সাওমের গুরুত্ব ও তাৎপর্য এই আর্টিকেলে এখন আমরা জানবো সাওমের সাদকাতুল ফিতর কিভাবে আদায় করতে হয়। আমরা পবিত্র রমজান মাসে সাওম পালন করি। আল্লাহ তা'আলার ইবাদত বন্দেগীতে মশগুল হয়। এসব দায়িত্ব পালনে অনেক সময় ভুল-ভ্রান্তি হয়ে যায়। সাওম পালনের যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি হয় তার ক্ষতিপূরণের জন্য শরীয়তে রমজানের শেষে সাদকায়ে ফিতর ওয়াজিব করে দেওয়া হয়েছে।
জিনেউস আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url