যাকাত কি বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়
যাকাত কি বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় আর্টিকেল আপনারা জানতে পারবে যাকাত সম্পর্কে সবকিছু বিস্তারিত। যাকাতের পরিচয়, যাকাতের গুরুত্ব, যাকাতের তাৎপর্য, যাকাতের ফজিলত ও যাকাতের সবকিছুই এখানে আলোচনা করা হবে।
সূচিপত্রঃ যাকাত কি বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়
যাকাত কি বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়
যাকাতের পরিচয়
যাকাতের গুরুত্ব
যাকাত ইসলামের পাঁচটি রুকনের মধ্যে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ রুকন। কুরআন পাকের বহু স্থানে সালাতের সাথে যাকাতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা বলেন- "আর তোমরা সালাত কায়েম কর এবং যাকাত প্রদান কর।" (সূরা মুযযাম্মিল, আয়াত 20)
যাকাত দরিদ্রদের অধিকার, ধনীদের অনুগ্রহ নয়। এটি ধনীদের উপর ফরজ। আল্লাহ তা'আলা বলেন-"তাদের (ধনীদের) ধন-সম্পদে অবশ্যই দরিদ্র ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।" ( সূরা আল-যারিয়াত, আয়াত ১৯)।
সুতরাং যার ওপর যাকাত ফরজ সে যদি স্বেচ্ছায় আদায় না করে তবে ইসলামী সরকারের পক্ষ থেকে জোর খাটিয়ে আদায় করা জায়েজ। কেউ যদি সম্পদ জমা করে রাখে, প্রাপকের হক যথাযথ আদায় না করে, তবে তাকে কঠোর আযাব ভোগ করতে হবে। এ সম্পর্কে কুরআন পাকে বলা হয়েছে-
"আর যারা সোনা-রুপা জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে খরচ করে না, তাদের কষ্টদায়ক শাস্তির সংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তা দিয়ে তাদের কপালে, পাজরে, এবং পিঠে দাগ দেওয়া হবে, সেদিন বলা হবে এই তো সেই সম্পদ, যা তোমারা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে। এখন সেই সঞ্চিত সম্পদের স্বাদ গ্রহণ করো।" (সূরা তওবা, আয়াত ৩৪-৩৫)
যাদের ওপর যাকাত ফরজ অথচ তারা তা আদায় করে না এবং দিতে অস্বীকার করে তারা ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে।আল্লাহ তায়ালা বলেন- "আর ধ্বংস ঐসব মুশরিকদের জন্যে, যারা যাকাত দেয় না ও আখিরাতকে অস্বীকার করে।" (সূরা হা-মিম সিজদাহ, আয়াত ৬-৭)।
ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রা) খেলাফতকালে কিছু লোক যাকাত দিতে অস্বীকার করল।খলিফা তাদের ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সমতুল্য মনে করলেন। তিনি ঘোষণা করলেন, হুজুর (সাঃ) জামানায় যারা যাকাত দিত তাদের মধ্যে কেউ যদি একটি ছাগলের বাচ্চাও দিতে অস্বীকার করে তবে তার বিরুদ্ধে আমি জিহাদ করব।
তিনি বলেন- "আল্লাহর কসম, যারা সালাত ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে তাদের বিরুদ্ধে আমি অবশ্যই লড়াই করব।" (বুখারী ও মুসলিম) সালাত ও যাকাত ইসলামের এমন দুটি রুকুন যা অস্বীকার করলে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায়।
যাকাতের তাৎপর্য
সাধারণ মানুষের অর্থের প্রতি লিপ্সা থাকে। সে কৃপণ স্বভাবের হয়, সে নিজের কষ্টে উপার্জিত অর্থ নিঃস্বার্থ ভাবে কাউকে দিতে চায় না। তাই দয়াময় আল্লাহ তা'আলা সম্পদশালী ব্যক্তিদের মনকে সম্পদের লিপ্সা, লোভ, কৃপণতা ও স্বার্থপরতা প্রভৃতি দোষ থেকে মুক্ত ও পবিত্র রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।তিনি মানুষের মনকে দয়ামায়া স্নেহ-ভালোবাসা ইত্যাদি মানবিক গুণসম্পন্ন করে তোলার জন্যে তাদের ওপর যাকাত ফরজ করে দিয়েছেন।
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম ও খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাকাত আদায় করা হতো।আধায়কৃত মালের বিতরণ সরকারী ব্যবস্থাপনায় হতো। নিসাবের নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ মালিকগণ যাকাত দিতে বাধ্য থাকতো। অন্যদিকে যারা যাকাত পাওয়ার হকদার তারা সকলেই যাকাতের অর্থ পেয়ে উপকৃত হত।
ইসলামী ব্যবস্থাপনার অভাবে আজকাল মাত্র অল্প সংখ্যক লোক ব্যক্তিগত যাকাত দেয়। যাকাত ব্যবস্থা করে সমাজকে কৃপণতা, সংকীর্ণতা, স্বার্থপরতা, হিংসা-বিদ্বেষ প্রভৃতি বদঅভ্যাস থেকে পবিত্র করে।পারস্পরিক ভালোবাসা, ত্যাগ, দয়া-দাক্ষিণ্য ইত্যাদি উন্নত পবিত্র গুণাবলী সঞ্চার করে। কাজেই যাকাত প্রত্যেক নবীর উম্মতের উপর ফরজ ছিল।
যাকাতের ফজিলত
যাকাতের ফজিলত অনেক। যাকাত দিলে মাল পবিত্র হয়। এতে আল্লাহ তা'আলা বরকত দেন। যাকাত দানকারীদের আখিরাতে এত পরিমাণ পুরস্কার দেওয়া হবে যা মানুষ কল্পনাও করতে পারে না। হাদিসে কুদসিতে আছে, নবী করীম (সাঃ) বলেন- "আল্লাহ তা'আলা তার বান্দাকে বলেন, হে বনি আদম! আমার পথে খরচ করতে থাকো। আমি আমার অফুরন্ত ভান্ডার থেকে তোমাদের দিতে থাকবো।" (বুখারী ও মুসলিম)
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে- "এবং আল্লাহ বলেন, আমি অবশ্যই তোমাদের সাথে আছি যদি তোমরা সালাত কায়েম করতে থাকো এবং যাকাত দিতে থাকো।" (সূরা আল-মায়দা, আয়াত ১২)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন, "দানশীল ব্যক্তি আল্লাহর নিকটবর্তী, জান্নাতের নিকটবর্তী, আল্লাহর বান্দাদের নিকটবর্তী এবং জাহান্নাম থেকে দূরবর্তী। অপরদিকে কৃপণ আল্লাহর থেকে দূরে, আল্লাহর বান্দাদের থেকে দূরে এবং জাহান্নামের নিকটে। একজন জাহিল দানশীল একজন কৃপণ আবিদ অপেক্ষা আল্লাহর কাছে অনেক বেশি পছন্দনীয়।" (তিরমিজি)
যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত
যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত সাতটি
১. মুসলিম হওয়া, 2. নিসবের মালিক হওয়া, ৩. নিসব পরিমাণ সম্পদের প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত হওয়া, ৪. ঋণগ্রস্ত না হওয়া, ৫. সম্পদ এক বছর স্থায়ী হওয়া, ৬. জ্ঞান সম্পন্ন হওয়া, ৭. বালেগ হওয়া,
মুসলমান হওয়া
যাকাত মুসলমানের উপর ফরজ। অমুসলমানের উপর যাকাত ফরজ নয়। কাজেই কোন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করলে তাকে তার অতীত জীবনের যাকাত নিতে হবে না। যেদিন মুসলমান হবে সেদিন থেকে হিসাব করে যাকাত দিতে হবে।
নিসাবের মালিক হওয়া
যে পরিমাণ মালের মালিক হলে শরীয়তে যাকাত ফরজ হয় সে পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া।
নিসাব পরিমাণ সম্পদ প্রয়োজনের অতিরিক্ত হওয়া
প্রয়োজন বলতে ওই সব জিনিসপত্রকে বোঝায় যার উপর মানুষের জীবন যাপন নির্ভর করে। যেমন খাওয়া-দাওয়া, পোশাক-পরিচ্ছেদ, বসবাসের বাড়িঘর, পেশাজীবীরা যন্ত্রপাতি ইত্যাদি। যানবাহনের নৌকা, সাইকেল, মটর, পশু, কৃষি কাজের সরঞ্জাম, পড়ালেখার বই-কিতাব এসব কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস। এগুলোর ওপর যাকাত ফরজ হবেনা।
ঋণগ্রস্ত না হওয়া
কোন ব্যক্তির নিকট যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে কিন্তু ঐ ব্যক্তি যদি ঋণগ্রস্ত থাকে তবে তার ওপর যাকাত ফরজ হবেনা। এখানে ঋণগ্রস্ত বলতে শুধুমাত্র জীবন ধারণের মৌলিক প্রয়োজনে ঋণ গ্রহণকারীকে বোঝায়। ঋণ পরিশোধ করার পর যদি নিসাব পরিমাণ মাল হাতে থাকে তাহলে যাকাত দিতে হবে।
মাল এক বছর কাল স্থায়ী থাকা
কোন ব্যক্তির হাতে নিসাব পরিমাণ মাল হলে তার উপর যাকাত ফরজ হবে না। মালিকের কাছে নিসাব পরিমান মাল এক বছর কাল থাকতে হবে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেন- "কোন ব্যক্তি যে কোন উপায়ে সম্পদের মালিক হোক না কেন, তার ওপর যাকাত তখনই ফরজ হবে যখন তা পূর্ণ এক বছরকাল স্থায়ী থাকবে।" (তিরমিজি)
জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া
যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য জ্ঞান সম্পন্ন হওয়া আবশ্যক। যার জ্ঞান বুদ্ধি নেই যেমন পাগল তার ওপর যাকাত ফরজ নয়।
বালেগ হওয়া
যাকাত দাতা কে বালেগ হতে হবে । শিশু, নাবালেগ যত সম্পদের মালিকই হোক না কেন বালেগ হওয়ার পূর্বে তার ওপর যাকাত ফরজ হবে না।
যাকাতের নিসাব
'নিসাব' অর্থ যাকাত ফরজ হওয়ার জন্য সম্পদের নির্ধারিত পরিমাণ। সারা বছর জীবন যাত্রার প্রয়োজনে ব্যয় নির্বাহের পর বছরের শেষে যার হাতে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে তাকে বলা হয় সাহিবে নিসাব।সাহিবে নিসাব এর ওপর যাকাত ফরজ।হিসাবের পরিমাণ হল সোনা কমপক্ষে সাড়ে সাত তলা অথবা রুপা কমপক্ষে সাড়ে ৫২ তলা অথবা ওই মূল্যের অর্ধ বা সম্পদ।
স্ত্রীলোকের ব্যবহার্য সোনা রুপার অলংকার জীবনের আবশ্যকীয় মৌলিক বস্তুর অন্তর্ভুক্ত নয়। কাজে অলংকার নিসাব পরিমাণ হলে যাকাত দিতে হবে। সোনা রুপা ব্যতীত অন্য কোন ধাতুর যথা তামা, কাসা, পিতল ব্যবহৃত জিনিস হিসেবে থাকলে যাকাত দিতে হবে না। তবে ব্যবসা সামগ্রী হলে যাকাত দিতে হবে। যদি এক বছর পর্যন্ত হাতে থাকে এবং সবকিছু মিলে তার মূল্য সাড়ে সাত তোলা সোনা বা সাড়ে ৫২ তোলা রুপের মূল্যের সমপরিমাণ বা বেশি হয় তাহলে যাকাত দিতে হবে।
উৎপন্ন শস্যের যাকাত
যাকাত কি বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় এখন আমরা জানবো উৎপন্ন শস্যের যাকাত কিভাবে বের করতে হয়। ধান, গম, জব, খেজুর ইত্যাদি শস্যাদি বৃষ্টির পানিতে জন্মিলে প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত সকল ফসলের ১০ ভাগের ১ ভাগ যাকাত রূপে দিতে হবে। একে উশর বলা হয়। আর সেচ ব্যবস্থায় উৎপন্ন ফসলের ২০ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হবে।
যাকাতের মাসারিফ
যাকাত সকলকে দেয়া যায় না। কেবলমাত্র ৮ শ্রেণীর লোককে যাকাত দেয়া যায়। যাদেরকে যাকাত দেয়া যায় তাদেরকে বলা হয় যাকাতের মাসারিফ। মাসারিফ অর্থ ব্যয় করার খাত। কোন কোন খাতে যাকাতের অর্থ ব্যয় করতে হবে তা আল্লাহ তা'আলা স্বয়ং নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কুরআন পাকে বলা হয়েছে-
"যাকাত কেবল নিঃস্ব, অভাবগ্রস্ত ও যাকাত সংশ্লিষ্ট কর্মচারী, যাকাত চিত্ত আকর্ষণ করা হয় তাদের জন্য, দাসমুক্তি, ঋণভারাক্রান্ত, আল্লাহর পথে সংগ্রামকারী ও মুসাফিরদের জন্য। এটি আল্লাহর বিধান।" (সূরা তওবা, আয়াত ৬০)
যাকাতের মাসারিফ আটটি
অভাবগ্রস্ত বা ফকির, সম্বলহীন মিসকিন, যাকাতের জন্য নিয়োজিত কর্মচারীবৃন্দ, মন জয় করার উদ্দেশ্যে, মুক্তিকামী দাস, ঋণগ্রস্ত, আল্লাহর পথে অর্থাৎ ইসলামের খিদমতে নিয়োজিত ব্যক্তি, অসহায় প্রবাসী পথিক।
অভাবগ্রস্ত বা ফকির
ফকির বলতে ঐ সকল লোককে বোঝায় যাদের কিছু না কিছু সম্পদ আছে কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা যথেষ্ট নয়। যাদের জীবন দানের জন্য অপরের উপর নির্ভর করতে হয়। জীবিকা অর্জনে অক্ষম ব্যাক্তি, পঙ্গু, এতিম শিশু, বিধবা, স্বাস্থ্যহীন দুর্বল বেকার এবং যারা দুর্ঘটনা বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার এমন লোকদের সাময়িকভাবে যাকাতের খাত থেকে সাহায্য করা যেতে পারে। তাদের জন্য স্থায়ী ভাতার ব্যবস্থা করাও যেতে পারে।
সম্বলহীন মিসকিন
মিসকিন বলতে ঐ সব সম্ভ্রান্ত দরিদ্র লোককে বোঝায় যাদের সম্পদ বলতে কিছুই নেই এবং যারা ভীষণ অভাবগ্রস্ত থাকা সত্ত্বেও সম্মানের ভয়ে কারো কাছে হাত পাতে না। হাদিসে মিসকিন এর সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এভাবে-
"যে ব্যক্তি তার প্রয়োজন মোতাবেক সম্পদ পায় না অথচ আত্মসম্মানের ভয়ে সে এমনভাবে চলে যে তাকে অভাবী বলে বোঝাও যায় না, যাতে লোকেরা তাকে আর্থিক সাহায্য করতে পারে। আর সে সাহায্যের জন্য কারো কাছে হাতেও পাতে না, কিছু চায়ও না।" (বুখারী ও মুসলিম)
যাকাতের জন্য নিয়োজিত কর্মচারীবৃন্দ
যারা যাকাত আদায় করে রক্ষণাবেক্ষণ করে, বন্টন করে ও হিসাবপত্র রাখে। তারা আর্থিক সঙ্গতিসম্পন্ন হলেও যাকাত থেকে তাদের বেতন দেয়া যাবে।
মন জয় করার উদ্দেশ্যে
ইসলামিক সমাজের শক্তি বৃদ্ধির জন্য যাদের মন জয় করা আবশ্যক তাদের মোয়াল্লাফাতুল কুলুব বলা হয়েছে। ইসলামের স্বার্থে যাদের মন জয় করা যাদের বিরোধিতা বন্ধ করার প্রয়োজন এইসব লোকের কাফির বা দুর্বল চিত্রের মুসলমান উভয় প্রকার হতে পারে। এ ধরনের লোকদের যাকাত দেওয়া যায়।ইসলামের প্রাথমিক যুগে এ জাতীয় লোককে যাকাত দেওয়া হতো।
মুক্তিকামী গোলাম বা দাস
যে গোলাম তার মনিবের সাথে এই মর্মে চুক্তি করেছে যে, এত পরিমাণ অর্থ দিলে তাকে আজাদ করে দেওয়া হবে, এমন গোলাম কে বলে মুকাতাব। আজাদীর মূল্য পরিষদের জন্য মুকাতাবকে যাকাত দেওয়া যেতে পারে। বর্তমানে ইসলামে ক্রীতদাস পথে চালু নেই বিধায় এ খাতে যাকাতের অর্থ বন্টন করা হয় না।
ঋণগ্রস্ত
যারা ঋণের বোঝায় পিষ্ট নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে অক্ষম, তাদের যাকাত দিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে সাহায্য করা যায়।
ফি সাবিলিল্লাহ
ফি সাবিলিল্লাহ অর্থ আল্লাহর পথে জিহাদ। শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত। ইসলামের প্রচার প্রসার এবং কুফরি ব্যবস্থাকে নির্মল করে ইসলামী ব্যবস্থাকে কায়েমের জন্য সকল প্রচেষ্টাকে জিহাদ বলে। সে চেষ্টা মুখের দ্বারা, কলমের দ্বারা, তরবারি দ্বারা এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে বিভিন্ন হতে পারে। ইসলামের খেদমতে নিয়োজিত এরূপ ব্যক্তিকে যাকাত থেকে সাহায্য করা যায়।
অসহায় প্রবাসী প্রতীক
কোন ব্যক্তির সফরে গিয়ে অসহায় অবস্থায় পড়লে বা যাত্রাপথে আর্থিক বিপদে পড়লে সাময়িকভাবে তাকে যাকাতের অর্থ প্রদান করা যাবে।
যাকাতের সামাজিক প্রভাব
যাকাতের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করা। সমাজের কেউ সম্পদের পাহাড় গড়বে, সুউচ্চ ইমারতে বসবাস করবে, বিলাস-বহুল জীবন যাপন করবে, আর কেউ অনাহারে, অর্ধাহারে দিন কাটাবে, ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরবে; শিক্ষা, খাদ্যবস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদি মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারবে না, শান্তি ও সাম্যের ধর্ম ইসলাম তা কিছুতেই সমর্থন করে না। কাজে সকল শ্রেণীর নাগরিকের মধ্যে অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য ইসলাম ধনীদের উপর যাকাত ফরজ করেছন।
নবী করীম (সাঃ) বলেন, "আল্লাহ তা'আলা লোকের ওপর সাদকা বা যাকাত ফরজ করেছেন। তা নেওয়া হবে ধনীদের নিকট থেকে এবং বিলিয়ে দেয়া হবে দুঃস্থদের মধ্যে।" (বুখারী ও মুসলিম) যাকাতের মাধ্যমে সমাজের ধনী-দরিদ্র মধ্যকার বিরাজমান বৈষম্য দূর হয়। তাদের মধ্যে অর্থনৈতিক সমতার ক্ষেত্রে প্রস্তুত হয়।
আল্লাহর নির্দেশ মত যথাযথভাবে যাকাত প্রদান করলে সমাজের কোন লোক অন্নহীন, বস্ত্রহীন, গৃহহীন থাকবে না। কেউ উপোস থাকবে না। কেউ বিনা চিকিৎসায় কষ্ট পাবে না। সম্পদশালী ব্যক্তিদের স্মমিলিত প্রচেষ্টায় যাকাত ও ধানের অর্থে অভাবীদের প্রয়োজন মিটিয়ে অনেক জনহিতকর এবং কল্যাণমূলক কাজ করা যায়। বহু দরিদ্র ব্যক্তিদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বন করে তোলা যায়। স্বাস্থ্যবান দরিদ্র শ্রমিকদের তার শ্রমের উপযোগী উপকরণ দেওয়া যায়।
দরিদ্রের জন্য অনেক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান যেমন এতিমখানা স্থাপন করা যায়। এমনিভাবে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালালে এমন এক সময় আসবে যখন যাকাত গ্রহণ করার লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। ইসলামের প্রথম যুগে এমনি পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে অপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয়েছিল। দৃষ্টান্ত স্বরূপ খলিফা হযরত ওমর বিন আব্দুল আজিজ এর সময় কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। তার আমলে যাকাত নেওয়ার মতো লোক খুঁজে পাওয়া কষ্টকর ছিল।
জিনেউস আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url