আমের মুকুল আসার পর করণীয় - ভালো ফলন পেতে যা করবেন
আমের মুকুল আসার পর করণীয় এই আর্টিকেলে আমরা এখন আমের মুকুল আসলে যে সকল কাজ করতে হবে, সে সকল কাজ বিস্তারিত আপনাদের মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করবো। আমের মুকুল আসা গাছের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়।
এ সময় সঠিক পরিচর্যা না করলে মুকুল ঝরে যেতে পারে। যা ফলনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই আমাদের আম গাছে মুকুল আসার পর পরে সঠিক ব্যবস্থাপনা ও যত্ন নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
সূচিপত্রঃ আমের মুকুল আসার পর করণীয় - ভালো ফলন পেতে যা করবেন
আমের মুকুল আসার পর করণীয়
আমের মুকুল আসার পর করণীয় এই প্রবন্ধে আমরা এখন আমের মুকুল আসার পরে যে সকল কাজ করতে হবে তা বিস্তারিত আলোচনা করবো। আমের মুকুল আসার পর পরিচর্যা না করলে আমের ফলনে ব্যাঘাত ঘটবে। তাই আমের মুকুল আসলে আমাদের আম গাছের প্রতি অনেক যত্নবান হতে হবে। আম একটি সুমিষ্ট ও সুপ্রিয় ফল। বাজারে চাহিদা অনেক।
আমের মুকুল আসার সময় সঠিক যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন পরে। কারণ এ পর্যায়েটিতে আমের ফলন নির্ধারণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সঠিক যত্ন নিলে না নিলে মুকুল ঝরে যেতে পারে। রোগ এবং পোকামাকড়ের অনেক আক্রমণ হতে পারে। ফলে আমের মুকুলে অনেক ক্ষতি হয়। পাশাপাশি আমের ফলনে অনেক ব্যাঘাত ঘাটে।
আমের মুকুল আসে কোন মাসে
আমের মুকুল আসে কোন মাসে আমের মুকুল আসার পর করণীয় এই আর্টিকেলে এখন আমরা এই বিষয়বস্তুটি সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা করবো। নিম্নের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা তুলে ধরা হলো।
আমের মুকুল সাধারণত শীতে হয়। কোন কোন অঞ্চলে দেখা যায় শীতের শেষ দিকে হয় আবার কোন কোন অঞ্চলে গভীর শীতে হয় অর্থাৎ যখন তীব্র শীত পড়ে তখন হয়। কোন কোন অঞ্চলে দেখা যায় এটি পৌষ মাস থেকে অথবা মাঘ মাস থেকে শুরু হয়। আবার কোন কোন অঞ্চলে দেখা যায় ফাল্গুন এবং চৈত্র মাসে আমের মুকুল আসা শুরু হয়।
আমের মুকুল সাধারণত শীতের শেষ দিকে বা বসন্তের শুরুর দিকে আসে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে আসে, তবে আবহাওয়া এবং অঞ্চল বেঁধে এই সময় একটু ভিন্ন হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ আম গাছে সার প্রয়োগ পদ্ধতি
আমের মুকুলে কি স্প্রে করতে হবে
আমের মুকুলে কি স্প্রে করতে হয় আমের মুকুল আসার পর করণীয় এই প্রবন্ধে এখন আমরা এই বিষয়টি বিস্তারিত জানবো। নিম্নে এই বিষয় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আকারে বিবরণ দেয়া হলো।
আমের মুকুল আসলে সঠিকভাবে যত্ন নিলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। আর এই সময় যদি সঠিক যত্নের অভাব হয় তাহলে অনেক মুকুল ঝরে যেতে পারে। বিভিন্ন প্রকারের পোকামাকড়ের আক্রমণ হতে পারে। তাই আমাদের ভালো ফলন পেতে হলে আমের মুকুল আসার পরপরই, যে সকল স্প্রে আছে সে সকল স্প্রেগুলো নিয়ম মেনে করা উচিত।
যখন আমের মুকুল আসে তখন নানারকম ছত্রাকনাশক এবং কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। এর কারণ হচ্ছে যেন মুকুলগুলো ভালোভাবে থাকে এবং সেইসাথে মুকুল গুলো ঝরে পড়ে না যায়। এ মুকুল আসার পরে কিছু স্প্রে আছে যেগুলো মুকুল আসার আগে এবং পরে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। নিম্নে কিছু স্প্রের কথা তুলে ধরা হলো।
বোরিক এসিড বা বোরণ স্প্রে, এটি মুকুলের পরাগায়ন উন্নত করে এবং ফুলের স্থায়িত্ব বাড়াতে সাহায্য করে থাকে।পটাশিয়াম নাইট্রেট, মুকুলের সঠিক বিকাশ এবং ফুলের ঝরে পড়া কমাতে এটি সাহায্য করে। স্প্রে করার কিছু সময়সূচি রয়েছে। নিম্নে এই সম্পর্কে তুলে ধরা হলো।
- প্রথম স্প্রেটি দিতে হবে মুকুল বের হওয়ার পর।
- দ্বিতীয় স্প্রেটি ১০ থেকে ১২ দিন পর।
- শেষ বা তৃতীয় যখন প্রয়োজন হবে স্প্রে মুকুল ধরে রাখার জন্য দিতে হবে।
আমের মুকুলের রোগ ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ
আমের মুকুলের রোগ ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ সঠিকভাবে না করলে সঠিক ফলন পাওয়া সম্ভব নয়।আমের মুকুলে পোকামাকড়ের আক্রমণ বলতে থ্রিপস, মাকড়সা, মিলিবাগ এগুলো আক্রমণ করে থাকে। এছাড়া ছত্রাক নাশক রোগ হয় যেমন বিভিন্নভাবে মুকুল পচা অন্যতম। এই জন্য কিছু কীটনাশক স্প্রে করতে হয় এ ধরনের রোগ ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণের জন্য।
পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে কীটনাশক
থ্রিপস ও মিলিবাগ দমন করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে ইমিডাক্লোরিইপিড ( Imidacloprid )। আবার আরেক ধরনের ওষুধ রয়েছে বা কীটনাশক রয়েছে যেটা পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী এটি হলো এসিটামিপিড ( Acetamiprid )। আর মাকড়সার আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য একটি অন্যতম কীটনাশক ডাইমিথোয়েট ( Dimethoate )।
ছত্রাক নাশক
মুকুল পচার রোগ প্রতিরোধের জন্য কার্যকার একটি ছত্রাক নাশক হলো প্রোপিকোনাজল ( Propiconazole )। আরেকটি ছত্রাকনাশক হচ্ছে ফাংগাল সংক্রমণ প্রতিরোধে এটি এটার নাম হলো টিল্ট ( Tilt )। এরপরে ছত্রাক জনিত বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে কার্যকর একটি ছত্রাক নাশক হচ্ছে কপার অক্সিক্লোরাইড ( Copper Oxychloride )।
আমের মুকুল পরিচর্যা কিভাবে করতে হবে
আমের মুকুল পরিচর্যা কিভাবে করতে হবে আমের মুকুল আসার পর করণীয় এই আর্টিকেলে এ বিষয়টি আমরা এখন বিস্তারিত আলোচনা করবো। আমের মুকুল আসলে সঠিক পরিচর্যা করতে হবে। এ সময় সঠিক পরিচর্যা করলে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। এবং পাশাপাশি আমের গাছের ভালো হয়, কেননা যত্ন নিলে শুধু আমের মুকুল বা ভালো ফলন নয় গাছও ভালো থাকে।
আমের মুকুল আসার পর গাছের যত্ন পরিচর্যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ এই পর্যায়ের সঠিক পরিচর্যা না করলে মুকুল ঝরে যেতে পারে। এমনকি ফলন কম হতে পারে। মুকুল ধরে রাখার জন্য কীটনাশক ব্যবহার থেকে শুরু করে সেচ ও সার প্রয়োগে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
কেননা পোকামাকড় বিভিন্ন ছত্রাকের আক্রমণে আমের মুকুল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সেই সাথে পরিচর্যা যদি না নেয়া হয় তাহলে দেখা যাবে গাছো দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। তাই গাছের সঠিক পরিচর্যার জন্য ও বিভিন্ন পোকামাকড় দমন এবং ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে যা উপরে আগে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি সেই বিষয়টি মনোযোগ সহকারে দেখবেন বা পড়বেন।
মুকুল আসার পর পরিমিত সেচ দেওয়া
মুকুল আসার পর পরিমিত সেচ দিতে হবে। কেননা আপনি যদি পরিমিত সেচ না দেন, তাহলে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব নয়। আপনি যদি ভালো ফলন পেতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে ভালো ফলন পেতে হলে মুকুল আসার পর সঠিক সময়ে সুন্দরভাবে সেচ দিতে হবে। নিম্নে সেচ দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হলো।
মুকুল আসার পর গাছে পরিমিত পানি দেওয়া প্রয়োজন। তবে অতিরিক্ত সেচ দিলে মুকুল ঝরে পড়তে পারে। বিশেষ করে মুকুল আসার পর সেচের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। শুকনো মৌসুমী পরিমিত পরিমাণে পানি সরবরাহ করা উচিত যাতে গাছের মুকুল শুকিয়ে না যায়। সঠিক অবস্থা বিবেচনা করে গাছে পর্যাপ্ত পানি দিলে ফলন ধরার হার বাড়ে।
সেচ দেওয়ার পাশাপাশি আমাদের অবশ্যই সুষম সার প্রয়োগ করতে হবে। কেননা সুষম সার প্রয়োগ করলে আমের মুকুল এবং গাছ অনেক ভালো থাকে। বিশেষ করে আপনি যদি ফসফরাস পটাশ এবং নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ সার প্রয়োগ করেন, তাহলে এ সময় মুকুলের বৃদ্ধি ভালো হয় এবং ফলের গুণগত মানও ভালো হয়।
মুকুলের সঠিক পরাগায়ন পদ্ধতি
আমের মুকুলের সঠিক পরাগায়ন হলে আমের ফলন অধিক হয়। অর্থাৎ সঠিক পরাগায়ন যদি আমের মুকুলে ঘটে থাকে, তবে অধিকা হারে ফলন বৃদ্ধি পাবে। আমের মুকুল আসার পর করণীয় এই আর্টিকেলে এ বিষয়টি নিম্নে তুলে ধরা হলো।
আম গাছের মুকুলের সঠিকভাবে পরাগায়ন হলে ফলন বেশি হয়। আমের ভালো ফলন পেতে হলে মুকুলে সঠিকভাবে পরাগায়ন হওয়া জরুরী। পরাগায়নের জন্য পোকামাকড় যেমন মৌমাছি এবং প্রজাপতি আশেপাশে থাকা দরকার। প্রয়োজনে পরাগানের জন্য প্রাকৃতিক পরাগায়ন নিশ্চিত করার পাশাপাশি গাছে কৃত্রিম পরাগায়ন কৌশল প্রয়োগ করা যেতে পারে।
অতিরিক্ত মুকুল ছাঁটাই
আম গাছে অতিরিক্ত মুকুল অনেক সময় পরিলক্ষিত হয়। দেখা যায় যে আম গাছে অনেক জটাধারী এবং প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত মুকুল দেখা যায়। এই অতিরিক্ত মুকুল গুলো সঠিকভাবে ছাঁটাই করলে আমের ফলনটা ভালো হয়ে থাকে।
আম গাছে খুব বেশি মুকুল আসলে তা পরে ফল ধারণের সময় সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। অতিরিক্ত মুকুলের কারণে গাছের শক্তি ব্যয় হয়। ফলে সব মুকুল থেকে ফল আসতে পারে না। তাই মুকুল ছাঁটাই করে বাড়তি মুকুল অপসারণ করতে হয়। এতে গাছের পুষ্টিমান সংরক্ষণ হয় এবং সেই সাথে সাথে সঠিকভাবে ফল ধরা সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
আবহাওয়ার প্রতি নজর রাখা
অবশ্যই আবার প্রতি নজর রাখতে হবে। কেননা বৈরী আবহাওয়া মুকুল থেকে শুরু করে আমের অনেক ক্ষতি করতে পারে। মুকুল আসার সময় হঠাৎ বৃষ্টি বা শিলা বৃষ্টি হলে তা মুকুলের ক্ষতি করতে পারে। তাই এ সময়ে আবহাওয়ার পূর্বভাসের ওপর নজর রাখা উচিত। প্রয়োজনে গাছকে সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
মুকুলের সময় গাছকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে প্রয়োজনে গাছের চারপাশে সুরক্ষামূলক নেট অথবা ছাউনির ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
শেষ কথা
পরিশেষে বলা যায় যে মুকুল আসার পর এ সকল কাজগুলো সঠিকভাবে পালন করলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে বলে আমি আশা করি। ভালো ফলন পাওয়ার জন্য সব ধরনের কীটনাশক এবং ছত্রাকনাশক পাশাপাশি সুষম সার ও সেচ ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মুকুল আসার পর সুন্দরভাবে উপরে বর্ণিত সকল ব্যবস্থা যদি আপনি গ্রহণ করেন তাহলে আশা করা যায় ভালো ফলন পাবেন। সবগুলো কাজ নিয়মমাফিক করলে অবশ্যই ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব।
জিনেউস আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url