খেজুরের গুড়ের অপকারিতা - খেজুরের গুড়ের পুষ্টি উপাদান
খেজুরের গুড়ের অপকারিতা এই আর্টিকেলে এখন আপনাদের মাঝে খেজুরের গুড়ের অপকারিতা ও খেজুরের নানা পুষ্টি উপাদান এবং গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।আর্টিকেলটি অবশ্যই মনোযোগ সহকারে পড়বেন।
খেজুরের গুড় সাধারণত শীতকালে বাঙ্গালীদের খাদ্য তালিকায় অন্যতম একটি জনপ্রিয় খাবার। এটা স্বাস্থ্যের জন্য কিছু উপকারী হলেও এর কিছু অপকারিতা রয়েছে। এই গুড় অতিরিক্ত খেলে শরীরের ওপর নানা রকম নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
পেজ সূচিপত্রঃ খেজুরের গুড়ের অপকারিতা - খেজুরের গুড়ের পুষ্টি উপাদান
খেজুরের গুড়ের অপকারিতা
খেজুরের গুড়ের অপকারিতা এই প্রবন্ধে আমি আপনাদের মাঝে খেজুরের গুড়ের অপকারিতা ও এর নানারকম পুষ্টি গুনাগুন, পুষ্টি উপাদান এবং খেলে কি সমস্যা হয় সেগুলো আপনাদের মাঝে তুলে ধরবো। এছাড়াও গুড় এবং চিনির যে পার্থক্য রয়েছে এবং কি পরিমান খেলে এটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হবে সেই বিষয়টিও এই আর্টিকেলে তুলে ধরা হয়েছে।
নিম্নে খেজুর গুড়ের কিছু অপকারিতা তুলে ধরা হলো-
- প্রতিদিন খেজুরের গুড় খেলে শরীরে অনেক মেদ বা ভুড়ি জমতে পারে।
- খেজুরের গুড় অতিরিক্ত খেলে দ্রুত ওজন বৃদ্ধি পায়।
- এই গুড় খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের ডায়াবেটিস বেড়ে যায়।
- এই গুড় অতিরিক্ত পরিমাণ খেলে পেটে গ্যাস হয়।
- এই গুড় অতিরিক্ত খেলে পেটের ফলা ভাব, এমনকি বদহজম হতে পারে।
- এই গুড় খেলে দাঁতের ক্যাভিটি হতে পারে।
খেজুরের গুড়ে কি থাকে
খেজুরের গুড়ে কি থাকে, এ বিষয় সম্পর্কে এখন আমরা খেজুরের গুড়ের অপকারিতা এই প্রবন্ধ বিস্তারিত জানবো। খেজুরের গুড়ের কিছু পুষ্টি উপাদান রয়েছে। খেজুরের যে সকল ভিটামিন বা খনিজ থাকে সেগুলো শরীরকে শীতের সময় উষ্ণ রাখতে বিষয়ক ভূমিকা পালন করে। নিম্নে খেজুরের গুড়ে কি থাকে সে বিষয়টি তুলে ধরা হলো।
সাধারণত খেজুরের গুড়ে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি৬, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম থাকে। এ সকল উপাদানগুলো শরীরের শক্তি যোগায় এবং শরীরকে শীতের সময় উষ্ণ রাখে।
আরও পড়ুনঃ মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার খাবার
খেজুরের গুড়ের পুষ্টি উপাদান
খেজুরের গুড়ের পুষ্টি উপাদান চলুন জেনে নেই খেজুরের গুড়ের অপকারিতা এই আর্টিকেলে। খেজুরের গুড়ের যে সকল পুষ্টি উপাদান রয়েছে সেগুলো আমাদের শরীরের শক্তি ও অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে থাকে। প্রাকৃতিক মিষ্টি এবং ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই খেজুরের গুড়। নিম্নে এর পুষ্টি উপাদান গুলো উল্লেখ করা হলো।
উপাদান | ১০০ গ্রাম খেজুরের গুড়ে পরিমাণ |
---|---|
ক্যালোরি | ৩৩৩ ক্যালোরি |
কার্বোহাইড্রেট | ৮৫ গ্রাম |
চিনি | ৭৫ গ্রাম |
প্রোটিন | ০.৫ গ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ৮০ মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ৮০ মিলিগ্রাম |
পটাশিয়াম | ১০৩০ মিলিগ্রাম |
ফাইবার | ০.২ গ্রাম |
ফসফরাস | ৬৫ মিলিগ্রাম |
ভিটামিন বি৬ | ০.২ মিলিগ্রাম |
আয়রন | ১১ মিলিগ্রাম |
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট | পরিমিত |
আরও পড়ুনঃ পাউডার দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা
খেজুরের গুড়ের বিভিন্ন পুষ্টিগুণ
খেজুরের গুড়ের বিভিন্ন পুষ্টিগুণ সম্পর্কে চলুন বিস্তারিত জেনে নেই। এই আর্টিকেলে আপনাদের মাঝে আমি চেষ্টা করছি খেজুরের গুড় সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার। নিম্নে খেজুরের গুড়ের বিভিন্ন পুষ্টি গুনাগুন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
- ক্যালোরি, খেজুরের গুড়ে উচ্চ পরিমাণ ক্যালরি সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি দ্রুত শক্তি প্রদান করে।
- কার্বোহাইড্রেট, এটি কার্বোহাইড্রেট এবং প্রাকৃতিক চিনিতে সমৃদ্ধ যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি এবং শরীরের দ্রুত গ্লুকোজ সরবরাহ করে থাকে।
- ভিটামিন বি৬, এটি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করে, পাশাপাশি স্নায়ুতন্ত্রের জন্য অনেক উপকারী।
- পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সহায়ক ভূমিকা রাখে এবং সেইসাথে ম্যাগনেসিয়াম মাংসপেশি সঠিক কার্যক্রমে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
খেজুরের গুড় খেলে কি কি সমস্যা হয়
খেজুরের গুড় খেলে কি কি সমস্যা হয় এখন আমরা এ বিষয়টি জেনে নেব। খেজুরের গুড় খেলে কিছু শরীরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার ফলে আমাদের স্বাস্থ্যের নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। নিম্নের সমস্যাগুলো তুলে ধরা হলো।
- ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ঝুঁকি, যারা ডায়াবেটিস আক্রান্ত তাদের জন্য খেজুরের গুড় খাওয়া অনেক বিপদজনক হতে পারে। এর উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনটেক্স দ্রুত ব্লাড সুগার বাড়ায়। যারা ডায়াবেটিসে ভুগেন তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
- দাঁতের সমস্যা, চিনি দাঁতের জন্য বেশ ক্ষতিকারক। এই খেজুরের গুড় দাঁতের চারপাশে প্লাক তৈরি করে যা ক্যাভিটি ও অন্যান্য দাঁতের সমস্যার কারণ হতে পারে।
- হজমের সমস্যা, খেজুরের গুড়ে ফ্রুক্টোজ থাকে, এটা থাকলে হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার ফলে গ্যাস, পেট ফোলোভাব ও বদহজমের সমস্যা দেখা দেয়।
- ওজন বৃদ্ধি, প্রতিদিন বেশি পরিমাণে খেজুরের গুড় খেলে অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণ হয়, যা ওজন বৃদ্ধি করতে এবং মেদ জমাতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে।
- অতিরিক্ত চিনির প্রভাব, খেজুরের গুড়ে প্রাকৃতিক চিনি বেশি পরিমাণে থাকে। অতিরিক্ত চিনি শরীরে ইনসুলিনের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং ব্লাড সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে।
আরও পড়ুনঃ শীতের পিঠা-পুলি বানানোর নতুন কৌশল
চিনি ও গুড়ের পার্থক্য
চিনি ও গুড়ের পার্থক্য পাঠক আমাদের জানা দরকার। চিনি এবং গুড় উভয় মিষ্টি স্বাদের হওয়ায় শান্তর রান্না এবং মিষ্টি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে তবে এদের উৎস প্রসেসিং পুষ্টিগুণ এবং স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাবের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে নিচে তিনিও গুড়ের প্রধান প্রধান পার্থক্য আলোচনা করা হলো।
বিষয় | চিনি | গুড় |
---|---|---|
প্রসেসিং | উচ্চ মাত্রার পরিশোধন প্রক্রিয়ায় তৈরি। | সাধারণত প্রাকৃতিক এবং কম প্রসেসিং প্রক্রিয়ায় তৈরি। |
উৎস | আখ অথবা বিট থেকে তৈরি। | আখ বা খেজুরের রস থেকে তৈরি। |
রং | সাদা বা ক্রিস্টল স্বচ্ছ। | বাদামি, সোনালী বা গাঢ় বাদামি। |
প্রকৃত চিনি | সুক্রোজ। | ফ্রুক্টোজ, সুক্রোজ, গ্লুকোজ। |
স্বাদ | খাঁটি মিষ্টি এবং নরমাল স্বাদ। | মিষ্টির সাথে হালকা কারামেল স্বাদ। |
পুষ্টিগুণ | তেমন কোনো ভিটামিন মিনারেল থাকে না। | ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন ও ভিটামিন বি৬। |
গ্লাইসেমিক ইনডেক্স | গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি, রক্তে শর্করা দ্রুত বাড়ায়। | তুলনামূলক কম, ধীরে ধীরে শর্করা বাড়ায়। |
শরীরের ওপর প্রভাব | দ্রুত রক্তে শর্করা বৃদ্ধি করে, ইনসুলিনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে। | ধীরে শর্করা রিলিজ করে এবং পুষ্টিগুণও সরবরাহ করে। |
উৎপাদন খরচ | তুলনামূলক ভাবে সস্তা। | চিনি থেকে কিছুটা ব্যয়বহুল। |
খেজুরের গুড় কতটুকু খাওয়া ভালো
খেজুরের গুড় কতটুকু খাওয়া ভালো এ বিষয়টি আমাদের জানা অনেক প্রয়োজন। কেননা খেজুরের গুড় কতটুকু খেলে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো তা জানা যাবে। স্বাস্থ্যের ভালোর জন্য এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি না হয় সে সম্পর্কে জানার জন্য এই পরিমাণের বিষয়টি জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
খেজুরের গুড় খেতে হলে পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। দিনে ১০ থেকে ১৫ গ্রাম বা এক চামচের মত খাওয়া সাধারণত নিরাপদ। তবে এটা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়াই ভালো।
শেষ কথা
পরিশেষে বলা যায় খেজুরের গুড় একটি সুস্বাদু প্রাকৃতিক মিষ্টি জাতীয় খাবার, যা খাওয়ার জন্য আমাদের একটু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ এর কিছু উপকারিতা রয়েছে ও অপকারিতা রয়েছে। যেগুলো জানা থাকলে আমাদের শরীরের জন্য ভালো।
বিশেষ করে যারা ডায়াবেটিস ও দাঁতের সমস্যায় ভুগছেন তারা খেজুরের গুড় সতর্কতার সাথে খাবেন। কেননা এতে অনেক ধরনের সমস্যা হতে পারে পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন।
জিনেউস আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url