নুডুলস এর উপকারিতা ও অপকারিতা - বিস্তারিত জানুন
নুডুলস এর উপকারিতা ও অপকারিতা এই আর্টিকেলে আপনাদের মাঝে নুডুলস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরবো। আপনি এই আর্টিকেলে নুডুলস খাওয়ার সব বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
পেজ সূচিপত্রঃ নুডুলস এর উপকারিতা ও অপকারিতা - বিস্তারিত জানুন
নুডুলস এর উপকারিতা ও অপকারিতা
নুডুলস এর উপকারিতা ও অপকারিতা এই প্রবন্ধে আপনারা নুডুলস এর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন, অর্থাৎ এটা খেলে আপনার ক্ষতি হবে, না উপকার হবে সে বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক নুডুলস এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে।
নুডুলস এমন একটি জনপ্রিয় খাবার যা শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ লোক পর্যন্ত এটি খেয়ে থাকে। এ খাবারটি মূলত ময়দা বা চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি করা হয়। নিম্নে নুডুলস এর উপকারিতা উল্লেখ করা হলো।
- নুডুলস সহজে পাওয়া যায় এবং অল্প সময় তৈরি করা যায়।
- অনেক নুডুলসে ভিটামিন ও মিনারেল এবং প্রোটিন যুক্ত থাকে, যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়।
- নুডুলস একটি সাশ্রয় খাদ্য, যা নিম্ন আয়ের মানুষও খেতে পারে।
- নুডুলস সহজেই হজম হয়।
- এটি শিশু ও বয়স্ক মানুষের সুস্থতার পর খাদ্য গ্রহণের জন্য উপযুক্ত।
- নুডুলস খেলে ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। কেনোনা বেশিরভাগ নুডুলসে প্রচুর ক্যালোরি ও চর্বি থাকে।
- নুডুলস খেলে উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়।
- নুডুলস খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। কেননা ইনস্ট্যান্ট নুডুলসে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম থাকে ও প্রিজারভেটিভ থাকে।
- নুডুলসে প্রোটিন ও ফাইবার অন্যান্য উপাদান এর অভাব থাকে, ফলে এটি দীর্ঘমেয়াদী খেতে থাকলে অপুষ্টিজনিত সমস্যা হবে।
নুডুলস এর ক্ষতিকর দিক
- নুডুলসে উচ্চ ক্যালরি ও চর্বি থাকে। ইনস্ট্যান্ট নুডুলসে উচ্চ ক্যালোরে চর্বিযুক্ত হয়। নিয়মিত এবং অধিক পরিমাণে খেলে এটি ওজন বাড়াতে পারে যা স্থুলতা অন্যান্য স্বাস্থ্যের সমস্যা হতে পারে।
- নুডুলস অতিরিক্ত সোডিয়াম থাকে, যার ফলে দীর্ঘমেয়াদে উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
- নুডুলসে প্রিজারভেটিভ ও রাসায়নিক উপাদান থাকে, এই বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান দীর্ঘমেয়াদে শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এগুলো হজম সমস্যা এবং অ্যালার্জির কারণ হতে পারে।
- নুডুলস একটি প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং এতে প্রোটিন, ফাইবার এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান থাকে না। ফলে এটি দীর্ঘমেয়াদি ধরে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করলে অপুষ্টি জনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- উচ্চমাত্রায় গ্লাসেমিক ইন্ডেক্স থাকে যা দ্রুত রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এটি ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে এবং সেই সাথে যারা ডায়াবেটিসের আক্রান্ত তাদের জন্য ক্ষতি হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার খাবার
বাচ্চাদের নুডুলস খাওয়ার উপকারিতা
- নুডুলস দূরত্ব রান্না করা যায় এবং খাওয়া যায়। এজন্য এটি ব্যস্ত সময়েও শিশুদের খাওয়ানোর জন্য একটি সুবিধা জনক খাবার হিসেবে বিবেচিত।
- নুডুলস বিভিন্ন আকার রং এবংস্বাদে পাওয়া যায়, যা বাচ্চাদের কাছে আকর্ষণীয় এটি শিশুদের খাবারের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে সহায্য করে থাকে।
- নুডুলস বাচ্চাদের জন্য প্রাথমিক শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। কারন এতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে। এটা বাচ্চাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করে থাকে।
- বর্তমানে অনেক নুডুলসে প্রোটিন, আয়রন, ভিটামিন এবং ক্যালসিয়াম যোগ করা হয়। এগুলো শিশুদের বিকাশ এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
- পুষ্টিমান বাড়ানো যায় নুডুলসের সাথে সবজি, মাংস, ডিম, বা চিজ যোগ করলে। যা বাচ্চাদের পুষ্টি চাহিদা পূরণের সহায়ক।
আরও পড়ুনঃ মাঠা খাওয়ার অপকারিতা
বাচ্চাদের জন্য কোন নুডুলস ভালো
- সোডিয়াম যুক্ত নুডুলস কম খেতে হবে। ইনস্ট্যান্ট নুডুলসে উচ্চমাত্রার সোডিয়াম থাকে যা বাচ্চাদের জন্য ক্ষতিকর। তাই কম সোডিয়ামযুক্ত শিশুবান্ধব ব্যান্ডের নুডুলস বেছে নিতে হবে।
- প্রিজারভেটিভ ও কৃত্রিম রং নুডলস থাকে, যা শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর হতে পারে। প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি নুডুলস শিশুদের জন্য বেশ ভালো।
- গমের তৈরি নুডুলস যাকে পূর্ণ শস্য বলে এগুলো দিয়ে তৈরি বাচ্চাদের জন্য বেশি স্বাস্থ্যকর। কারণ এজাতীয় নুডুলসে ফাইবার বেশি থাকে। এটি শিশুর হজমে সহায়তা করে থাকে এবং পুষ্টির মান উন্নত করে থাকে।
- অনেক ব্র্যান্ডে সবজি এবং প্রোটিনযুক্ত নুডুলস পাওয়া যায়, এমন নুডুলস আছে যা আপনাকে বেছে নিতে হবে। বাচ্চাদের জন্য এমন নুডুলস বেছে নিতে হবে, যেন বাচ্চারা আরো পুষ্টি পায় এবং তাদের শরীরের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- অনেক নুডুলসে ভিটামিন এ, সি, বি কমপ্লেক্স এবং আয়রন ও ক্যালসিয়াম থাকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শারীরিক বিকাশের সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
- বাচ্চাদের জন্য স্বাস্থ্যকর নুডুলস রান্নার জন্য সবজি যোগ করা যেতে পারে। নুডুলস সবজি যেমন গাজর, শিম, ব্রোকলি এবং প্রোটিন- ডিম বা মুরগির মাংস যোগ করতে পারেন। এছাড়া প্রিজারভেটিভ যুক্ত মশলা বা সস ব্যবহার না করে ঘরে তৈরি মশলা বা সস ব্যবহার করুন।
- আপনি নুডুলস ক্রয় করার সময় প্যাকেজিংয়ে দেখবেন যে কম সোডিয়াম আছে কিনা। প্রিজারভেটিভ ও কৃত্রিম রং নেই এমন নুডুলস নেবেন এবং সেই সাথে দেখবেন যে নুডুলসে যদি সবজি জাতীয় কোন উপাদান থাকে তাহলে এমন নুডুলস নিবেন।
নুডুলস খেলে কি ওজন কমে
- ইনস্ট্যান্ট নুডুলসে উচ্চ ক্যালোরি ও কার্বোহাইড্রেট থাকে, যার ফলে নিয়মিত খেলে ওজন বাড়ে কমে না।
- কম ফাইবার থাকে নুডুলসে, তাই ক্ষুদা অনুভূতি বাড়ায়। ফলে বারবার খাওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে ওজন কমবে না।
- নুডুলসের প্রোটিনের মাত্রা কম থাকে যা ওজন কমাতে বা বজায় রাখতে সহায়ক নয়।
- ইনস্ট্যান্ট নুডুলসে উচ্চমাত্রায় সোডিয়াম ও প্রিজারভেটিভ থাকে, যার শরীরে পানি ধারণ প্রবণতা বাড়ায় এবং এ কারণে ওজন বাড়ে।
- পূর্ণ শস্য আটা নুডুলস বেছে নিন এতে ফাইবার বেশি থাকে এবং এটি হজমে সহায়ক।
- সবজিও প্রোটিন যোগ করুন নুডুলস এর সাথে। সবজি, মুরগি বা ডিম যোগ করে এর পুষ্টিমূল্য বৃদ্ধি করতে পারেন।
- কম মসলাযুক্ত নুডুলস বেছে নিন। অতিরিক্ত মসলাযুক্ত নুডুলস এড়িয়ে চলুন, কারণ এ ধরণের নুডুলসে অতিরিক্ত ক্যালরি ও সোডিয়াম থাকে।
- নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে গ্রহণ করুন, একবারে বেশি নুডুলস না খেয়ে পরিমিত পরিমাণে খাওয়ার চেষ্টা করুন।
আরও পড়ুনঃ আপেল সিডার ভিনেগার খাওয়ার সময়
নুডুলস খেলে কি ওজন বাড়ে
- নুডুলসে সাধারণত কার্বোহাইডের পরিমাণ বেশি থাকে, যা দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে থাকে। তবে বেশি কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার নিয়মিতভাবে খেলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি জমে যা ওজন বৃদ্ধির কারণ।
- নুডুলসে ফাইবারের পরিমাণ কম থাকে, যা কারণে দ্রুত হজম হয়ে যায় এবং ক্ষুধা দূরত্ব ফিরে আসে। এর ফলে অনেক সময় অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের প্রবণতা থাকে যা ওজন বাড়ায়।
- নুডুলসে প্রোটিন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টির অভাব থাকে। প্রোটিন হজম সময় নেয় এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য পেট ভর্তি রাখে। প্রোটিনের অভাবে শরীরের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ কমে যায়, যার কারণে ওজন বৃদ্ধি হতে পারে।
- ইনস্ট্যান্ট নুডুলসে উচ্চমাত্রায় সোডিয়াম থাকে। যার কারণে এটি সাময়িকভাবে ওজন বাড়িয়ে তুলতে পারে।
আরও পড়ুনঃ পাউডার দুধের উপকারিতা ও অপকারিতা
নুডুলস তৈরির রেসিপি
- নুডুল সেদ্ধ করুন, একটি পাত্রে পানি গরম করুন এবং সামান্য লবণ ও তেল দিন। এরপর পানি ফুটে উঠলে নুডুলস দিয়ে সিদ্ধ করুন ও পানি থেকে আলাদা করে রাখুন।
- ডিম ভাজুন, এটা আপনার ঐচ্ছিক ব্যাপার। প্যানে সামান্য তেল দিয়ে ডিম ভেজে তুলে রেখে দিন।
- সবজি ভাজুন, একটি বড় প্যানে তেল গরম করে প্রথমে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে সামান্য নাড়াচাড়া করে, এরপর গাজর ক্যাপসিকাম ও শিম দিয়ে সবজিগুলো নরম হওয়া পর্যন্ত ভাজতে থাকুন।
- মসলা যোগ করুন, সবজির সাথে চিলি সস, সয়া সস এবং টমেটো সস দিন। সব মসলা ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
- সবজির সাথে সেদ্ধ নুডুলস মেশিয়ে নিন, ভালোভাবে নাড়াচাড়া করে নিন। যাতে সব প্রকার উপকরণ গুলো ভালোভাবে মিশে যায়। লবণ ও সাদা গোলমরিচের গুড়াগুলো দিন।
- ডিমের টুকরো এবং পেঁয়াজপাতা দিয়ে নুডুলস গার্নিশ করুন।
সঠিক পরিমাণে নুডুলস গ্রহণ
- পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করুন, একবারে এক প্যাকেট নুডুলসের অর্ধেক খাওয়াই যথেষ্ট। এতে প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ ক্যালোরি থাকে, যা একটি প্রধান খবার হিসেবে যথাযথ পরিমাণে ক্যালোরি থাকে। সপ্তাহে একবার বা দুইবারের বেশি না খাওয়াই ভালো।
- পুষ্টির ভারসাম্য বজায় রাখুন, নুডুলস খাওয়ার সময় এতে বিভিন্ন ধরনের সবজি যেমন গাজর, ব্রোকোলি, ক্যাপসিকাম, প্রোটিন যেমন ডিম, মুরগি যোগ করে খেতে পারেন, যাতে পুষ্টির ভারসাম্য থাকে।
- এভাবে খেলে নুডুলসে কার্বোহাইডের পাশাপাশি অন্যান্য পুষ্টিও পাবেন এবং পরিপূর্ণ অনুভূতি পাবেন।
- পূর্ণ শস্য নুডুলস বেছে নিন। সাধারণত ইনস্ট্যান্ট নুডুলসের পরিবর্তে পূর্ণ শস্য বা আটর নুডুলস খেতে পারেন। এতে ফাইবার বেশি থাকে। এটি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়ক এবং অনেক স্বাস্থ্যকর।
জিনেউস আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url