বারি গম ৩৩ চাষ পদ্ধতি এই আর্টিকেলে এখন আমরা জানবো কিভাবে বারি গম চাষ করা যায়। বারি গম ৩৩ বাংলাদেশের মাটিতে সফলভাবে উৎপাদিত গমের একটি নতুন উন্নত জাত। এ গমের জাতটি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত হয়।
এই গাম টি উচ্চ ফলনশীল এবং রোগ প্রতিরোধের বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করা হলে কৃষকরা ভালো ফলাফল বা ভালো ফলন পাবেন এবং আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবেন। আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়লে আপনি অনেক উপকৃত হবেন।
বারি গম ৩৩ চাষ পদ্ধতি এখন আমরা জানবো কিভাবে বারি গম ৩৩ চাষ করা যায় এ সম্পর্কে বিস্তারিত। মূলত বারি গম ৩৩ একটি উন্নত জাতের গম। এই গম রোগ প্রতিরোধী এবং উচ্চ ফলনশীল হওয়ায় এর চাহিদাও অনেক বেশি। নিম্নে বারি গম ৩৩ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
বারি গম ৩৩ চাষ করতে হলে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হয়। যেমন- চাষের উপযুক্ত সময় এর বপনকাল এর পাশাপাশি উত্তম একটি মাটির ব্যবস্থা তৈরি করতে হয়। এরপর পরে আমাদের জমি প্রস্তুতির সঠিকভাবে জমি প্রস্তুত করতে হয়। প্রথমে জমি চাষ তারপরে মাটির নরম করা এবং পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা করা প্রভৃতি।
এরপর বীজের মান, বপণ ও দূরত্ব রয়েছে সে বিষয়গুলো জানা অত্যন্ত জরুরী। এরপরে যখন গম বের হবে তখন কিছু সারের ব্যবহার করতে হবে, যেমন- ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি, জিপসাম ও জিংক এ জাতীয় সার সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করতে হবে। সেচ ব্যবস্থাপনা ভালো করতে হবে। কত দিন পর পর সেচ দিতে হয় এবং কয়টি সেচ দিতে হয় এ বিষয়গুলো।
এরপরেই বারি গম ৩৩ এর বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে বা পোকামাকড় দমনের বিভিন্ন বালাইনাশক ব্যবহার করা এ সম্পর্কে। আর এরপর কোন সময় বা কত দিন হলে ফসল সংগ্রহ করা যাবে সেই সম্পর্কে জানতে হবে। নিম্নে এ সকল বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে আমি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আশা করি আপনারা মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়বেন।
গম সম্পর্কে কিছু ধারণা
গম সম্পর্কে কিছু ধারণা চলুন এ বিষয়ে একটি প্রথমেই আমরা জেনে নেই। বারি গম ৩৩ চাষ পদ্ধতি এই আর্টিকেলে এ বিষয়টি যদি আপনার জানা থাকে তাহলে আপনি অনেক উপকৃত হবেন। তাই চলুন নিম্নে গম সম্পর্কে কিছু ধারণা দেয়।
এক বিঘা জমিতে কত মন গম হয়
গমের বীজ হার কত
গমের জাত কি কি
এক বিঘা জমিতে কত মন গম হয়- বাংলাদেশের সাধারণত ১ বিঘা জমিতে ১৫ থেকে ২০ মণ গম উৎপাদন হয় তবে ফলন আবহাওয়া মাঠে এবং চাষ পদ্ধতির ওপর নির্ভর করে কিছুটা কম বেশি হতে পারে। তাছাড়া উচ্চ ফলনশীল জাত গমের ফলন বৃদ্ধিতে সহ ায়ক হয়।
গমের বীজ হার কত- গম চাষের জন্য বীজের হার ড় সাধারণত অতিব গায়ে প্রতি বিঘায় ৩০ থেকে ৩৫ কেজি লাগে বীজের মান জমির উর্বরতা এবং বপন এর পদ্ধতির নির্ভর করে এই পরিমাণ সামান্য পরিবর্তিত হতে পারে তবে অনেক উচ্চ ফলনশীল যাতে বিঘাতে কেউ 40 থেকে 45 কেজি দেয়।
গমের জাত কি কি- গমের বিভিন্ন জাত রয়েছে। যেগুলো বাংলাদেশের চাষের জন্য উপযোগী। নিম্নে কিছু জনপ্রিয় জাতের নাম উল্লেখ করা হলো।
বারি গম ২৫ঃ অধিক ফলনশীল ও রোগ প্রতিরোধী।
বারি গম ২৬ঃ উচ্চ ফলনশীল ও গরম সহিষ্ণু।
বারি গম ২৮ঃ অধিক উৎপাদনশীল ও গুণগত মান ভালো।
বারি গম ৩০ঃ উচ্চতাপ সহিষ্ণু ও ফলনশীল।
বারি গম ৩৩ঃ লবণাক্ততা সহনশীল, যা উপকূল অঞ্চলে চাষের জন্য বেশ উপযোগী।
সদরীঃ বাংলাদেশের স্থানীয় একটি জাত, স্বল্প মেয়াদী ও মাঝারি ফলনশীল।
বারি গম ৩৩ চাষের উপযুক্ত সময় সম্পর্কে চলুন জেনে নেওয়া যাক। বারি গম ৩৩ চাষ পদ্ধতি এই আর্টিকেলে এখন আমরা বিস্তারিত জেনে নেব বারি গম ৩৩ চাষের উপযুক্ত সময়। নিম্নে বারি গম ৩৩ চাষের উপযুক্ত সময় বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হলো।
বারি গম ৩৩ চাষের উপযুক্ত সময়
উত্তম মাটির অবস্থা
বপনকাল
উত্তম মাটির অবস্থা
বারি গম ৩৩ চাষের জন্য উর্বর বেলে-দোআঁশ বা দোআঁশ মাটি বেশ উপযোগী। এ মাটিতে বারি গম ৩৩ অনেক ভালো হয়। তাই ভালো ফলন পেতে এই মাটি বেছে নেওয়া আবশ্যক। মাটির অম্লত্ব ( পিএইচ PH) ৬.৫ থেকে ৭.৫ এর মধ্যে থাকা বাঞ্ছনীয়।
বপনকাল
বারি গম ৩৩ এর উপযুক্ত বপনকাল হলো নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত। এ সময় বপন করা এই গমের জন্য খুবই ভালো। কেনোনা কেউ যদি এই সময় বপন করে থাকে তাহলে বীজের অঙ্কুরোদগম ভালো পাওয়া যায়।
বারি গম ৩৩ এর জমি প্রস্তুতি এ বিষয় সম্পর্কে চলুন এবার বিস্তারিত জেনে নেই। বারি গম ৩৩ চাষ পদ্ধতি এই আর্টিকেলে এখন আমরা এ বিষয়টি বিস্তারিত জানবো। নিম্নে বারি গম ৩৩ জমি প্রস্তুতি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
বারি গম ৩৩ জমি প্রস্তুতি
জমি চাষ
মাটি নরম ও ঝুরঝুরে করা
পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা
জমি চাষ- প্রথমে জমিকে খুব গভীরভাবে একবার চাষ করতে হবে। এরপর কমপক্ষে দুই থেকে তিনবার হালকা চাষ দিয়ে জমি সুষম করতে হবে। এরকম জমি যদি আপনি প্রস্তুত করেন তাহলে আপনি ভালো অঙ্কুরোদগম পাবেন এবং সেই সাথে সাথে ভালো ফলনও পাবেন।
মাটি নরম ও ঝুরঝুরে করা- এমনভাবে জমি মাটি ঝুরঝুরে করতে হবে, যেন আপনার গমের বীজ দ্রুত অঙ্কুরিত হয় এবং গাছ সুসমভাবে বৃদ্ধি পায়। এই কাজটি আপনি মাটি নরম অবস্থায় করতে পারবেন।
পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা- জমিতে অতিরিক্ত পানি জমে থাকলে গমের উৎপাদনে বাধা হতে পারে। তাই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা অনেক জরুরী। এমনভাবে জমি প্রস্তুত করবেন যেন জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকে।
উপরে বর্ণিত এ বিষয়গুলো ভালোভাবে পড়ে কাজ করলে আপনারা সুন্দর ভাবে জমি প্রস্তুত করতে পারবেন।
বারি গম ৩৩ বীজ ও বপন পদ্ধতি
বারি গম ৩৩ বীজ ও বপন পদ্ধতি জানা অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এ বিষয় সম্পর্কে আপনি যদি ভালোভাবে জানেন বা বোঝেন তাহলে অবশ্যই আপনার ফলন অনেক ভালো হবে এবং আপনি বিঘায় ১৭ মণ ফলন আরামে পাবেন। চলুন জেনে নেই বারি গম ৩৩ বীজ ও বপন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত।
বারি গম ৩৩ বীজ ও বপন পদ্ধতি
বীজের মান
বপনের দূরত্ব
বপনের পদ্ধতি
বীজের মান- উচ্চমানের এবং এর সাথে রোগমুক্ত বীজ ব্যবহার করুন। বারি গম ৩৩ এর ক্ষেত্রে প্রতি বিঘা জমির জন্য প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়।
বপনের দূরত্ব- এ গম বীজ গুলোর মধ্যে ১৫ সেন্টিমিটার দূরত্ব এবং সারি থেকে সারির মধ্যে ২৫ সেন্টিমিটার দূরত্ব বজায় রাখা অনেক ভালো। এভাবে বপন করলে গাছগুলো পর্যাপ্ত আলো বাতাস পায়।
বপনের পদ্ধতি- ছিটানো বা লাইনে বপন পদ্ধতি ব্যবহৃত হতে পারে, তবে লাইনে বপন পদ্ধতি সবচেয়ে কার্যকরী উপায়।
এ জাতীয় বীজ এবং এভাবে যদি বপন করা যায়, তবে ভালো ফলন পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়।
বারি গম ৩৩ এ সারের ব্যবহার চলুন এখন এই বিষয়টি ভালোভাবে জেনে নিই। সারের ব্যবহার সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। গম চাষের জন্য সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ ফলন বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তাই চলুন নিম্নে বারি গম ৩৩ এর সারের ব্যবহার সম্পর্কে জেনে নিই।
ইউরিয়া সারঃ ১১০-১২০ কেজি [একর]
টিএসপি সারঃ ৮৫-৯০ কেজি [একর]
এমওপি সারঃ ৫৫-৬০ কেজি [একর]
জিপসাম ও জিংকঃ প্রতি একরে প্রয়োজন অনুযায়ী প্রয়োগ করা উচিত
এভাবে সার প্রয়োগ করলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়।
বারি গম ৩৩ এ সেচ ব্যবস্থাপনা
বারি গম ৩৩ এ সেচ ব্যবস্থাপনা জানা এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা গাছের সুষম বৃদ্ধির জন্য সেচ ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গম চাষে সুষম বৃদ্ধি ও উন্নতফলনের জন্য সঠিক সময়ে সেচ প্রদান অপরিহার্য একটি বিষয়।
প্রথম সেচ- বপনের ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে।
দ্বিতীয় সেচ- এটি বুটিং স্টেজে অর্থাৎ বপনের প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ দিন পর।
তৃতীয় সেচ- ফুল ফোটা অবস্থায়।
এভাবে যদি আপনি সেচ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলেন বা সেচ দেন তাহলে আশা করা যায় যে আপনি খুব ভালো একটি ফলন পাবেন।
আগাছা নিয়ন্ত্রণ পোকা-মাকড় দমন চলুন এবার এ বিষয়টি ভালোভাবে জেনে নেই। এ বিষয় সম্পর্কে যদি আপনার সঠিক এবং ভাল মতন ধারণা থাকে তাহলে আপনার আগাছা নিয়ন্ত্রণ এবং দমনে কোন ধরনের সমস্যায় পড়তে হবে না। নিম্নে আগাছা নিয়ন্ত্রণ ও পোকা-মাকড় দমন সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো।
আগাছা নিয়ন্ত্রণ
রোগ ও পোকা-মাকড় দমন
আগাছা নিয়ন্ত্রণ
খেতে আগাছা থাকলে গাছের বৃদ্ধি কমে যায়। সঠিক সময়ে আগাছা পরিষ্কার করলে ফলন বাড়ে। আগাছা পরিস্কারের জন্য হাত দ্বারা পরিষ্কার বা আগাছা নাশক ব্যবহার করতে পারেন। তবে একটি বিষয় মনে রাখবেন আগাছা নাশক ব্যবহার কম করাই ভালো। কেনোনা এতে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি নষ্ট হয়ে যায়।
রোগ ও পোকা-মাকড় দমন
বারি গম ৩৩ গাছে সাধারণত ব্লাস্ট রোগ ও পাতার মরিচা রোগ হতে পারে। এজন্য প্রতি সপ্তাহে ফসল পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, এবং সেই সাথে ফাঙ্গিসাইড ও বালাইনাশক ব্যবহার করে রোগ ও পোকা-মাকড় নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
ফসল সংগ্রহের সময়
ফসল সংগ্রহের সময় চলুন এ বিষয়টি এবার সংক্ষিপ্ত আকারে জেনে নেই। নিম্নে ফসল সংগ্রহের সময় উল্লেখ করা হলো।
গমের শীষ সম্পূর্ণ সোনালী হলে এবং দানা শক্ত হলে ফসল সংগ্রহের উপযুক্ত সময় হয়ে থাকে। বারি গম ৩৩ সাধারণত ১১০ থেকে ১১৫ দিনে সংগ্রহের উপযোগী হয়ে ওঠে।
শেষ কথা
পরিশেষে বলা যায় এভাবে যদি এই গম চাষ করা যায় তাহলে আপনি অনেক ফলন পাবেন বলে আশা করা যায়। সেচ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে ফসল সংগ্রহ রোগ পোকা-মাকড় দমন এমনকি আগাছা নিয়ন্ত্রণ সবকিছুই আমি ভালোভাবে আপনাদের কাছে তুলে ধরেছি।
উপরিক্ত এ সকল বিষয়গুলো আপনি যদি মনোযোগ সহকারে পড়ে কাজে লাগান, তাহলে অবশ্যই অনেক উপকৃত হবেন বলে আমি আশা করি। প্রত্যেকটি বিষয় যত্ন সহকারে পড়া উচিত, তাহলে আমরা অবশ্যই এ সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারবো।
জিনেউস আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url