কাঁঠাল গাছের বৈশিষ্ট্য ও কাঁঠাল চাষের পদ্ধতি-বিস্তারিত জানুন
কাঁঠাল গাছের বৈশিষ্ট্য ও কাঁঠাল চাষের পদ্ধতি এই আর্টিকেলে আপনাদের মাঝে কাঁঠাল গাছের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন ধরনের কাঁঠালের সম্পর্কে এবং তার পাতার আকার আকৃতি ও কাঁঠাল চাষের উপযুক্ত সময় সকল কিছুই বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।
পেজ সূচিপত্রঃ কাঁঠাল গাছের বৈশিষ্ট্য ও কাঁঠাল চাষের পদ্ধতি-বিস্তারিত জানুন
- কাঁঠাল গাছের বৈশিষ্ট্য ও কাঁঠাল চাষের পদ্ধতি
- কাঁঠাল গাছের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য
- বিভিন্ন ধরনের কাঁঠাল সম্পর্কে জানুন
- কাঁঠাল গাছের পাতার আকার ও বৈশিষ্ট্য
- কাঁঠাল চাষের জন্য উপযুক্ত মাটি এবং জলবায়ু
- কাঁঠালের জাত নির্বাচন করা
- কিভাবে চারা রোপন করা যায়
- কাঁঠাল চাষের সেচ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা
- কাঁঠাল চাষে সার ব্যবস্থাপনা
- কাঁঠাল গাছের যত্ন ও ছাটাই
- কাঁঠাল গাছের বিভিন্ন রোগবালাই প্রতিরোধ
- কাঁঠাল সংগ্রহের সময়
- শেষ মন্তব্য
কাঁঠাল গাছের বৈশিষ্ট্য ও কাঁঠাল চাষের পদ্ধতি
- কাঁঠাল গাছ দীর্ঘজীবী এই গাছ প্রায় ৫০ থেকে ৭৫ বছর পর্যন্ত ফল দিতে পারে।
- এর ফুল সবুজে ভাব এবং ছোট আকৃতির গুচ্ছাকারে জন্মায়।
- কাঁঠাল গাছ- ফল, কাঠ, বীজ এগুলো থেকে আয় লাভের একটি ভালো উৎস।
- কাঁঠালের থাকে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিন এ, সি এবং খনিজ পদার্থ যেমন ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম থাকে। এটি হজম সহায়ক এবং শক্তিদায়ক।
কাঁঠাল গাছের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য
- এই গাছ মূলত ৮ থেকে ২৫ মিনিটের পর্যন্ত লম্বা হয়।
- এর কান্ড শক্ত, মসৃণ ও ধূসর বাদামী রঙের হয়।
- পাতা গাড়ো সবুজ, ডিম্বাকার ও শক্ত হয়।
- কাঁঠালের ফল বিশ্বের বৃহত্তম ফল গুলোর একটি যা ৫ থেকে ৩৫ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
- ফলের বাইরের চামড়া সবুজ বা হলুদভাব এবং এতে কাটাযুক্ত প্রলেপ থাকে।
- ভেতরের শাঁস মিষ্টি হলুদ বা কমলা রঙের এবং এতে শক্তবীজ থাকে।
- বীজ গোলাকার বা ডিম্বাকার এবং রান্না করে খাওয়াও যায়।
- গভীর, উর্বর ও আর্দ্র মাটিতে কাঁঠাল গাছ ভালো জন্মে থাকে।
- এটি উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুতে বেশি উৎপাদনশীল হয়।
- এটি জলাবদ্ধতা কম সহ্য করতে পারে, অর্থাৎ বেশি জলবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না।
বিভিন্ন ধরনের কাঁঠাল সম্পর্কে জানুন
- রসালো কাঁঠাল
- কঠিন কাঁঠাল
- গোফলা কাঁঠাল
- কাঁঠালপানা কাঁঠাল
- হাইব্রিড কাঁঠাল
- রসালো কাঁঠাল, রসালো কাঁঠালের কোষের মধ্যে প্রচুর রস থাকে। এটি অত্যন্ত মিষ্টি ও রসালো। এটি সাধারণত কাঁচা খাওয়ার জন্য উপযুক্ত।
- কঠিন কাঁঠাল, এ ধরনের কাঁঠালের কোষ বেশ শক্ত ও তুলনামূলকভাবে কম রসালো এটি বিশেষ করে রান্নার জন্য ব্যবহার করা হয়।
- গোফলা কাঁঠাল, এই কাঁঠাল ছোট এবং কোষ বড় হয়ে থাকে। ফলের কোষ গুলো সহজে আলাদা করা যায়। মিষ্টতার জন্য এই কাঁঠাল বেশ জনপ্রিয়।
- কাঁঠালপানা কাঁঠাল, এ ধরনের কাঁঠাল ছোট আকৃতির এবং কম রসালো। সাধারণত এটি গ্রাম এলাকায় বেশি দেখা যায়। এই কাঁঠাল রান্না ও আচার তৈরিতে ব্যবহার হয়ে থাকে।
- হাইব্রিড কাঁঠাল, এ ধরণের কাঁঠাল বিভিন্ন প্রজাতির সংমিশ্রণে উদ্ভাবিত। যা বেশি ফলনশীল এগুলো আকারে অনেক বড় ও স্বাদে অনেক উন্নত হয়। এটি বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
আরও পড়ুনঃ আম গাছে সার প্রয়োগ পদ্ধতি
কাঠাল গাছের পাতার আকার ও বৈশিষ্ট্য
- কাঁঠাল গাছের পাতা সাধারণ ডিম্বাকৃতি বা উপবৃত্তকার হয়ে থাকে।
- প্রাপ্তবয়স্ক পাতার দৈর্ঘ্য ১৫ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার এবং প্রস্থ ৭ থেকে ১২ সেন্টিমিটার হতে পারে।
- পাতা কচি অবস্থায় হালকা সবুজ রঙের হয় পরে ধীরে ধীরে গাড় সবুজ রং ধারণ করে।
- উপরিভাগ মসৃণ ও চকচকে তবে নিচের অংশ তুলনামূলক রুক্ষ।
- পাতায় সুস্পষ্ট মধ্যশিরা এবং তার থেকে শাখা-শিরা বেরিয়ে থাকে।
- পাতার বৃন্ত ছোট, দৈর্ঘ্যে দুই থেকে চার সেন্টিমিটার হয় এবং এটি মজবুত হয়।
কাঁঠাল চাষের জন্য উপযুক্ত মাটি এবং জলবায়ু
- গভীর, উর্বর ও পানি নিষ্কাশনের উপযোগী দো-আঁশ মাটি কাঁঠাল চাষের জন্য অনেক ভালো।
- মাটির পিএইচ [ PH ] মান ৫.৫ থেকে ৭.৫ হলে কাঁঠাল গাছের বৃদ্ধ ফলন বেশ ভালো হয়।
- পানি জমে না থাকে এমন উঁচু জমি চাষের জন্য বেছে নেওয়া উচিত।
- কাঁঠাল একটি উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুর ফসল।
- ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং মাঝারি বৃষ্টিপাত এক হাজার থেকে দুই হাজার মিলিমিটার, কাঁঠাল চাষের জন্য বেশ উপযোগী।
- গরম ও রোদ পরিবেশ কাঁঠালের ফলন বাড়াতে সাহায্য করে।
কাঁঠালের জাত নির্বাচন করা
কাঁঠালের জাত নির্বাচন করা চলুন আমরা এই বিষয়টা এখন বিস্তারিত জেনে নেই। কাঁঠাল গাছের বৈশিষ্ট্য ও কাঁঠাল চাষের পদ্ধতি এই আর্টিকেলে এখন আমরা জানবো কাঁঠালের জাত কিভাবে নির্বাচন করতে হয় বা কোন জাত গুলো আছে তার মধ্যে বেছে নিজের পছন্দ অনুযায়ী জাত নির্বাচন করা। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকারের কাঁঠালের জাত চাষ করা হয়। এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হলো।
- বাড়ি কাঁঠাল এক ও দুই
- রসালো কাঁঠাল
- গালা কাঁঠাল
- খাজা কাঁঠাল
এর মধ্যে জাত নির্বাচন করার সময় আপনার এলাকার জলবায়ু, চাহিদা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।
আরও পড়ুনঃ পেঁপে গাছের পাতা হলুদ হলে করণীয়
কিভাবে চারা রোপন করা যায়
- প্রতি গর্তে ১৫ থেকে ২০ কেজি পচা গোবর এবং এক কেজি টিএসপি সার মেশাতে হবে।
- জমি ভালোভাবে চাষ করে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
- মাটিতে জৈব সার গবর বা কম্পোস্ট মেশাতে হবে।
- চারা রোপনের জন্য এক মিটার গভীর এবং এক মিটার প্রস্থের গর্ত তৈরি করতে হবে।
- গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৮ থেকে ১০ মিটার রাখতে হবে।
- চারাগুলো রোপনের পর হালকা পানি দিতে হবে।
কাঁঠাল চাষের সেচ ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা
- বর্ষাকালে জমিতে যাতে পানি জমে না থাকে সেজন্য পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
- অতিরিক্ত পানি কাঁঠাল গাছের অনেক ক্ষতি করতে পারে।
- গ্রীষ্মকালে নিয়মিত সেচ দিতে হবে।
কাঁঠাল চাষে সার ব্যবস্থাপনা
কাঁঠাল চাষে সার ব্যবস্থাপনা এ বিষয়টি জানা আমাদের অনেক জরুরী। সঠিক সার প্রয়োগ বিধি যদি আমরা জানি তাহলে গাছের যত্নের কোন ত্রুটি থাকে না। কাঁঠাল গাছের বৈশিষ্ট্য ও কাঁঠাল চাষের পদ্ধতি আর্টিকেলে চলুন এবার আমরা জেনে নেই কাঁঠাল চাষের সার ব্যবস্থাপনা। নিম্নে কাঁঠাল চাষের সার ব্যবস্থাপনা উল্লেখ করা হলো।
- প্রতি গাছে ১০ কেজি পচা গবর, ২০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১০০ গ্রাম টিএসপি এবং ১০০ গ্রাম এমওপি সার দিতে হবে। এভাবে সার দিলে গাছের জন্য উপকার হয়।
- এরপর এক বছর পর আবার সার প্রয়োগ করতে হবে।
- বছরে দুইবার মার্চ - এপ্রিল ও সেপ্টেম্বর - অক্টোবর সারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। এটি মূলত দ্বিতীয় বা পরবর্তী বছরের সময় করতে হবে।
- জৈব সার ব্যবহার করলে ফলন আরো ভালো হয়ে থাকে।
কাঁঠাল গাছের যত্ন ও ছাটাই
- মরা ডালপালা ও অপ্রয়োজনীয় শাখা-প্রশাখা গুলো ছাঁটাই করাই ভালো।
- পোকামাকড় আক্রমণ হলে কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
- গাছের গোড়া ও আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে।
কাঁঠাল গাছের বিভিন্ন রোগবালাই প্রতিরোধ
- পোকার আক্রমণ
- গাছের গোড়া পচা রোগ
- ফল পচা রোগ
- পোকার আক্রমণ, বিভিন্ন ধরনের পোকার যে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক রয়েছে পোকার আক্রমণ দেখে সেই ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। তা নাহলে এ ধরনের কীটনাশক আগে ব্যবহার করতে হবে, আগে ব্যবহার করলে দেখা যাবে যে পোকার আক্রমণ হচ্ছে না।
- গাছের গোড়া পচা রোগ, কপার অক্সিক্লোরাইড ব্যবহার করলে এ রোগ দমন করা যায় বা প্রতিরোধ করা যায়।
- ফল পচা রোগ, আক্রান্ত ফল দূরত্ব সরে ফেলতে হবে না হলে অন্য ফলেও রোগটি ধরে যাবে।
কাঁঠাল সংগ্রহের সময়
- ফলের খোসার রং হলুদ হতে শুরু করলে এবং ঘ্রাণ বের হলে বুঝতে হবে ফল পরিপক্ক।
- ফুল আসার পর চার থেকে পাঁচ মাস পর কাঁঠাল সংগ্রহ করা যায়।
- ফল পেকে গেলে হাতে করে নিয়ে সাবধানে ফল সংগ্রহ করতে হবে।
জিনেউস আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url