কাদায় রসুন চাষ পদ্ধতি-জেনে নিন বিস্তারিত

কাদায় রসুন চাষ পদ্ধতি এই আর্টিকেলে আমরা জানবো কিভাবে কাদায় রসন চাষ করা যায় এবং সেই সাথে কেমন মাটি ও আবহাওয়া দরকার। এছাড়া চাষের জন্য উপযুক্ত সময়, বীজ নির্বাচন এবং কিভাবে সার প্রয়োগ করতে হবে ও রোগ বালাই দমন করতে হবে সে সম্পর্কে।
কাদায়-রসুন-চাষ-পদ্ধতি
রসুন আমাদের দৈনন্দিন রান্নার অপরিহার্য উপাদান বটে কিন্তু এটা শুধুমাত্র স্বাদ বৃদ্ধি করে না বরং অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা প্রদান করে থাকে। কাদামাটি বা জলবদ্ধতা মাটিতে রসুন চাষ একটি কার্যকরী পদ্ধতি যা সঠিক পরিচর্যা করলে ভালো ফসল বা ভালো ফলন দিতে পারে।

পেজ সূচিপত্রঃ কাদায় রসুন চাষ পদ্ধতি-জেনে নিন বিস্তারিত

কাদায় রসুন চাষ পদ্ধতি

কাদায় রসুন চাষ পদ্ধতি চলুন আমরা এ বিষয়টি এখন বিস্তারিত জেনে নেই। কাদায় রসুন চাষ পদ্ধতি এই আর্টিকেলে কিভাবে রসুন চাষ করলে অল্প খরচে বেশি পরিমাণ মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হবে সে সম্পর্কে আপনাদের মাঝে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। নিম্নে কাদায় রসুন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
 
রসুন বাংলাদেশের লাভজনক মসলা জাতীয় একটি ফসল। কাদামাটিতে চাষের মাধ্যমে খরচ কম হয় এবং উৎপাদন ভালো হয়। কাদায় রসুন চাষে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে চাষীদের অধিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হয়। তাই এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিজের বিষয়গুলো ভালোভাবে পড়ুন। আশা করি আপনারা অনেক উপকৃত হবেন।

কাদায় রসুন চাষের লাভজনকতা

কাদায় রসুন চাষের লাভজনকতা অনেক বেশিই রয়েছে। কাদায় রসুন চাষ পদ্ধতি এই আর্টিকেলে এখন আমরা এই বিষয়টি বিস্তারিত জেনে নেব। চলুন জেনে নেই কাদায় রসুন চাষের লাভজনকতা এ বিষয়টি। নিম্নে এ বিষয়টি তুলে ধরা হলো।

কাদায় রসুন চাষ করলে কোন ধরনের চাষাবাদ করা লাগে না, সেইসাথে পানি সেচ থেকে শুরু করে অন্যান্য বিষয়ে অনেক খরচ বাঁচা যায়। তাই যে জমি জলবদ্ধতা পর হালকা শুকনো বা কাদা রয়েছে এমন জমিতে রসুন চাষ করলে অনেক লাভ হয়। নিম্নে কাদায় রসুন চাষে লাভজনক বিষয়টি তুলে ধরা হলো

কাদায় রসুন চাষে উৎপাদন খরচ কম এবং ফলন বেশি হয়ে থাকে। সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে প্রতি হেক্টরে প্রায় ১০ থেকে ১২ টন রসুন উৎপাদন সম্ভব হয়। বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী এটি অত্যন্ত লাভজনক একটি ফসল।

কাদায় রসুন চাষের জন্য মাটি ও আবহাওয়া

কাদায় রসুন চাষের জন্য মাটি ও আবহাওয়া চলুন এবার এ বিষয়টি বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। কাদায় রসুন চাষ পদ্ধতি এই প্রবন্ধে কাদায় রসুন চাষের জন্য কেমন মাটি ও আবহাওয়া প্রয়োজন সে সম্পর্কে নিম্নে তুলে ধরা হলো।

মাটি
দো-আঁশ বা জলনিকাশ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ কাদামাটি সবচেয়ে উপযোগী। কেনোনা কাদামাটি যদি থাকে তাহলে এ ধরনের দো-আঁশ মাটি রসুন চাষের জন্য বেশ উপযুক্ত। এর মূল কারণ হচ্ছে কাদাযুক্ত দো-আঁশ মাটি অনেক উর্বরতা শক্তি সম্পন্ন মাটি। এ মাটিতে কম সার প্রয়োজন পরে। তাই এ ধরনের কাদামাটিতে রসুন চাষ করলে অনেক লাভজনক হয়।

আবহাওয়া
১৫ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রসুন চাষের জন্য আদর্শ। এ ধরনের তাপমাত্রার মূল কারণ হচ্ছে রসুন অতিরিক্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে না। অতিরিক্ত তাপমাত্রা যেখানে রয়েছে সেখানে যদি রসুন গাছ লাগানো হয়, তাহলে এর পাতা খুব সহজে নষ্ট হয়ে যাবে এবং ফলন হবে না।

চাষের উপযুক্ত সময় বীজ নির্বাচন ও প্রস্তুতি

চাষের উপযুক্ত সময় বীজ নির্বাচন ও প্রস্তুতি সম্পর্কে চলুন জেনে নেই। কাদায় রসুন চাষের জন্য উপযুক্ত সময় এবং বীজ নির্বাচন ও প্রস্তুতি এ বিষয়টি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেনোনা উত্তম বীজ নির্বাচন এবং সঠিক সময়ে যদি আমরা কাদায় রসুন চাষ না করতে পারি তাহলে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব হয় না। তাই চলুন এই প্রবন্ধে এ বিষয়টি বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
চাষের-উপযুক্ত-সময়-বীজ-নির্বাচন-ও-প্রস্তুতি
  • কাদামাটিতে রসুন চাষের জন্য উপযুক্ত সময় অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস।
  • চাষের আগে বীজগুলো নিম্নমানের ছত্রাকনাশক দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা যেতে পারে।
  • ভালো মানের রসুনের কোয়া বীজ হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।
  • রসুনের কোয়া রোপনের আগে ১০ থেকে ১২ ঘন্টার রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।
উপরের বর্ণনা অনুযায়ী যদি আপনি সঠিক সময়ে এবং উপযুক্ত বীজ নির্বাচন করতে পারেন, তাহলে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।

কাদায় রসুন চাষের বিস্তারিত পদ্ধতি

কাদায় রসুন চাষের বিস্তারিত পদ্ধতি সম্পর্কে জানা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কেনোনা এ পদ্ধতি যদি আমাদের জানা থাকে, তাহলে আমরা খুব সহজেই ভালোভাবে জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজগুলো সঠিকভাবে করতে পারবো। তাই চলুন জেনে নেই কাদায় রসুন চাষের বিস্তারিত পদ্ধতি।

মাটি প্রস্তুত পদ্ধতি
  • প্রথমে এমনভাবে জমি চাষ করতে হবে যেন মাটিগুলো ঝরঝরে ও সমান হয়। তবে কাদা মাটির ক্ষেত্রে জমি চাষের প্রয়োজন পরে না। 
  • প্রয়োজন হলে দুই থেকে চারটি পর্যন্ত চাষ করা যেতে পারে। শুকনো মাটির ক্ষেত্রে।
  • জলবদ্ধতা দূর করতে নালা তৈরি করতে হবে।

বীজ বপন পদ্ধতি
  • মাটি প্রস্তুতির পর রসুনের কোয়া ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি দূরত্ব রোপন করতে হবে।
  • কোয়া লাগানোর সময় রসুনের কোয়া মুকুলের দিক ওপরে রাখতে হবে।

এভাবে মাটি প্রস্তুত ও বীজ বপন করলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়। তাই উপরিক্ত নিয়ম গুলো অনুসরণ করুন।

কিভাবে সার প্রয়োগ করবেন

কিভাবে সার প্রয়োগ করবেন এ বিষয়টি জানা আমাদের অনেক জরুরী। কেনোনা সঠিক সময়ে সঠিক সার প্রয়োগ করলে ফলন ভালো পাওয়া যায়। নতুবা আমাদের ফসলের ক্ষতি হয় এবং সেই সাথে ফলন কম হয়। তাই চলুন কিভাবে সার প্রয়োগ করতে হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই। নিম্নে কিভাবে সার প্রয়োগ করতে হবে তা উল্লেখ করা হলো।

সার প্রয়োগ পদ্ধতি
  • রসুন চাষের জন্য, জৈব সার- ৮ থেকে ১০ টন প্রতি হেক্টরে প্রয়োগ করতে হবে।
  • রাসায়নিক সার, যেমন- ইউরিয়া ১৫০ কেজি হেক্টর প্রতি
  • টিএসপি ১০০ কেজি হেক্টর প্রতি
  • পটাশ ৭৫ কেজি হেক্টর প্রতি প্রয়োগ করতে হবে।
লক্ষ্য করুন
  • বীজ বপণের আগে অর্ধেক সার মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে এবং বাকিটা চাষের বিভিন্ন পর্যায়ে প্রয়োগ  করতে হবে।
এই পদ্ধতিতে সার প্রয়োগ করলে আশা করা যায় আপনি ভালোভাবে ফসল তৈরি করতে পারবেন এবং ভালো ফলন পাবেন।

রোগবালাই ও প্রতিকার পরিচর্যা

রোগবালাই ও প্রতিকার পরিচর্যা চলুন এবার এ বিষয়টি বিস্তারিত জেনে নেই। এ বিষয়টি জানা থাকলে রোগ বালাই প্রতিরোধ করা যায় এবং সেইসাথে সুন্দরভাবে পরিচর্যা করা যায়। নিম্নে এ বিষয়টি বিস্তারিত উল্লেখ করা হলো।
রোগবালাই-ও-প্রতিকার-পরিচর্যা
রোগবালাই ও প্রতিকার
  • সাদা পচা রোগঃ এ ধরনের রোগ রসুনের পাতায় দেখা যায়। যখন এটি পাতায় দেখা যায় তখন পাতাটি হলুদ বর্ণ এবং কি মরে যায়। এর সমাধান হচ্ছে কার্বেন্ডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা।
  • থ্রিপস পোকাঃ এ পোকার আক্রমণ হচ্ছে পাতা বের হয় এর মূল অংশটি কেটে দেয়। এর সমাধান হচ্ছে ম্যালাথিয়ন স্প্রে করা।
  • নিমাটোডের আক্রমণঃ বীজ ও মাটি ভালোভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। যেন এটার ডিমসহ সবকিছু নষ্ট হয়ে যায়।
পরিচর্যা
  • রোপনের ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে সেচ এবং পরবর্তী সেচ পনেরো দিনের ব্যবধানে করতে হবে।
  • জমিতে অতিরিক্ততা জলাবদ্ধতা যেন না থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
  • জমি সবসময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে।

উপরের বর্ণনা অনুযায়ী যদি আপনি এ সকল কাজ সঠিকভাবে করেন, তাহলে ফসল ভালো হবে বলে আশা করা যায় এবং সেই সাথে আপনি উচ্চ ফলন পাবেন।

ফসল সংগ্রহ

ফসল সংগ্রহ সময় চলুন জেনে নেওয়া যাক। সাধারণত অনেক মানুষ দেখা যায় যে, অনেক সময় ধরে ফসল জমিতে রাখে। তো এ কাজটি না করে আমরা সঠিক সময়ে ফসল সংগ্রহ করবো। চলুন জেনে নেই কত দিনে ফসল সংগ্রহ করা যায়।

  • ফসল রোপণের ৯০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে রসুন সংগ্রহ উপযোগী হয়।
  • পাতার রং হলুদ হয়ে আসলে ফসল সংগ্রহ করতে হয়।
  • সংগ্রহের পর রসুন দুই থেকে তিন দিন রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে হয়।

শেষ মন্তব্য

উপরে আলোচনা অনুযায়ী আপনি যদি রসুন চাষ করেন, তাহলে আশা করা যায় অবশ্যই একটি ভালো ফলন পাবেন। উপরের বর্ণনা অনুযায়ী সকল আলোচনা থেকে কাদায় রসুন চাষ পদ্ধতি আপনাদের অনেক ভালো লাগবে ও সেই সাথে অনেক উপকৃত হবেন বলে আমি আশা করছি।

কাদামাটিতে রসুন চাষে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে, এটি চাষীদের জন্য একটি লাভজনক ফসল হয়ে উঠতে পারে। সঠিক সময় নির্বাচন ও পরিচর্যা এবং রোগ দমন ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ভালো ফলন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জিনেউস আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url