মটর ডালের পুষ্টি উপাদান, উপকারিতা, অপকারিতা বিস্তারিত জানুন
মটর ডালের পুষ্টি উপাদান এ আর্টিকেলে আমরা জানবো মটর ডালের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান এবং এর উপকারিতা অপকারিতা বিষয়।এছাড়া মটর ডালের সঠিক গ্রহণ মাত্রা ও স্বাস্থ্য উপকারিতা ও রান্না প্রণালী সম্পর্কেও বিস্তারিত জানবো।
মটর ডাল (পিজিয়াম স্যাটিভাম) আমাদের খাদ্য তালিকায় পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি খাদ্য। এতে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ ও আঁশের প্রধান উৎস। মটর ডাল স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী এবং সেই সাথে এটি নিয়মিত খাদ্য তালিকা অন্তর্ভুক্ত করা হলে বিভিন্ন পুষ্টিগত সুবিধা পাওয়া যায়।
সূচিপত্রঃ মটর ডালের পুষ্টি উপাদান, উপকারিতা, অপকারিতা বিস্তারিত জানুন
মটর ডালের পুষ্টি উপাদান
মটর ডালের পুষ্টি উপাদানগুলো আমাদের শরীরের নানা ধরনের উপকার করে থাকে। এ সকল পুষ্টি উপাদান নিয়মিত খেলে আমরা বিভিন্ন পুষ্টিগত উপকার লাভ করে থাকি। মটর ডালের পুষ্ট উপাদান এই আর্টিকেলে নিম্নে এ বিষয়টি তুলে ধরা হলো।
মটর ডালের পুষ্টি উপাদান [প্রতি ১০০ গ্রামে]
পুষ্টি উপাদান | পরিমাণ |
---|---|
ক্যালোরি | ১১৬ ক্যালোরি |
কার্বোহাইড্রেট | ২১ গ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ২৫ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ৩৩ মিলিগ্রাম |
পটাসিয়াম | ৩১৫ মিলিগ্রাম |
আয়রন | ১.৫ মিলিগ্রাম |
প্রোটিন | ৭ গ্রাম |
ফ্যাট | ০.৪ গ্রাম |
ভিটামিন বি৬ | ০.১৬ মিলিগ্রাম |
ফাইবার | ৮ গ্রাম |
ফলেট | ৬৫ মাইক্রোগ্রাম |
মটর ডালের স্বাস্থ্য উপকারিতা
মটর ডালের স্বাস্থ্য উপকারিতা চলুন এবার এ বিষয়টি জেনে নেয়া যাক। মটর ডালের পুষ্টি উপাদান এই আর্টিকেলে এখন আমরা জানবো মটর ডালের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত। নিম্নে এই বিষয়টি উল্লেখ করা হলো।
- মটর ডালের আঁশ পটাশিয়াম এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে, সেই সাথে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
- মটর ডালে উচ্চমাত্রায় প্রোটিন থাকে, যা শরীরের কোষ পুনর্গঠন এবং সেই সাথে পেশী গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
- মটর ডালে ফ্ল্যাভোনয়েড ও ক্যারোটিনয়েড থাকে যা শরীরে মুক্ত র্যাডিকেলের ক্ষতি প্রতিরোধ করতে পারে।
- এতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকায় হজম শক্তি বাড়াতে পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে থাকে।
- লো ক্যালোরি ও লো ফ্যাট যুক্ত হওয়ায় এটি ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়ক।
মূলত এর সঠিক পুষ্টি উপাদানের কারণে এভাবে আমাদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা করে থাকে। তাই এটি সঠিক পরিমাণে খাওয়া আমাদের একান্ত উচিত।
মটর ডালের ১৫ টি উপকারিতা
মটর ডালের ১৫ টি উপকারিতা এখন এ বিষয়টি তুলে ধরা হবে। মটর ডালের পুষ্টি উপাদান এই আর্টিকেলে নিম্নে মটর ডালের ১৫ টি উপকারিতা উল্লেখ করা হলো।
- লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স থাকার কারণে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে থাকে।
- এতে থাকা ফাইবার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ সহায়ক। যা হৃদরোগ প্রতিরোধ করে।
- ভিটামিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
- এতে থাকা ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম হাড়ের জন্য বেশ উপকারী।
- ভিটামিন ও খনিজ উপাদান থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- পটাশিয়াম থাকার কারণে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ সহায়ক ভূমিকা রাখে।
- অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় দেহের কোষকে সুরক্ষা দেয়।
- কম ক্যালোরি থাকার কারণে ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
- এতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম স্নায়ু সুস্থ্য রাখতে কার্যকর।
- মটর ডালে প্রোটিন রয়েছে যা বেশি গঠনে সহায়ক।
- প্রোটিন ও আয়রন থাকায় চুলের জন্য উপকারী।
- আয়রন থাকায় রক্তস্বল্পতা রোধে সহায়তা করে।
- ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় হজমে সহায়তা করে।
- এতে থাকা কার্বোহাইড্রেট শক্তি বৃদ্ধি করে।
- আয়রন সমৃদ্ধ হওয়ায় রক্তের মান বাড়ায়।
এই উপকারগুলো আমরা যদি নিয়মিত সঠিক মাত্রায় খেয়ে থাকি তাহলে তা উপভোগ করতে পারবো।
মটর ডালের ১০ টি অপকারিতা
মটর ডালের ১০ টি অপকারিতা চলুন এবার এই বিষয়টি জেনে নেওয়া যাক। মটর ডালের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে এর বেশ কিছু অপকারিতা লক্ষ্য করা যায়। তবে মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে খেলে এ সকল অপকারিতা গুলো লক্ষ্য করা যায় না। মটর ডালের পুষ্টি উপাদান এই আর্টিকেলে মটর ডালের ১০ টি অপকারিতা উল্লেখ করা হলো।
অপকারিতা
- অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে মটর ডাল, মিনারেল শোষণে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
- কিছু মানুষের মটর ডালের প্রতি অ্যালার্জি থাকে যা চুলকানি হতে পারে।
- উচ্চ ক্যালোরি থাকায় অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।
- কিছু পরিমাণে পিউরিন থাকে যা ইউরিক এসিডের মাত্রা বাড়াতে পারে।
- কিছু মানুষের মটর ডাল খেলে মাথাব্যথা বা মাইগ্রেন দেখা দিতে পারে।
- এই মটর ডাল বেশি পরিমাণে খেলে ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে।
- অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ কিডনির উপর চাপ বাড়াতে পারে।
- বেশি পরিমাণে খেলে পেটের ব্যাথা বা অস্বস্তি হতে পারে।
- মটর ডাল অতিরিক্ত গ্রহনে গ্যাস সৃষ্টি হতে পারে।
- গাউড বা আর্থ্রাইটিস সমস্যা হতে পারে।
অতিরিক্ত পরিমাণ এই মটর ডাল খেলে উপরে বর্ণিত এ ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই নির্দিষ্ট পরিমাণে মটর ডাল খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী।
মটর ডাল রান্না প্রণালী
মটর ডাল রান্না প্রণালী এ বিষয়টি আমাদের জন্য জানা থাকে তাহলে আমাদের মটর ডাল স্বাস্থ্যকর উপায়ে খাওয়া যায়। তাই চলুন নিম্নে মটর ডাল রান্না প্রণালী সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
প্রয়োজনীয় উপকরণ
- মটরডাল এক কাপ
- পেঁয়াজ কুচি একটি বড়
- রসুন কুচি ৩ থেকে ৪ কুয়া
- আধা বাটা এক চা চামচ
- হলুদ গুড়ো ১ থেকে ২ চামচ
- মরিচ গুঁড়ো ১ থেকে ২ চা চামচ স্বাদ অনুযায়ী
- জিরাগুড়ো ১ থেকে ২ চামচ
- তেল দুই টেবিল চামচ
- ধনেপাতা কুচি ২ টেবিল চামচ
- লবণ স্বাদ অনুযায়ী
- পানি প্রয়োজন অনুযায়ী
প্রস্তুত প্রণালী
- প্রথমে মটর ডাল ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন এরপর ১ থেকে ২ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন এতে ভালো সিদ্ধ হবে।
- একটি পাত্রে ডাল নিয়ে তাতে পানি ও সামান্য লবণ দিয়ে সিদ্ধ করতে দিন ডাল নরম হয়ে এলে চুলা থেকে নামিয়ে নিন।
- এরপর একটি কড়াইয়ে তেল গরম করে তাতে পেঁয়াজ ও রসুন কুচি দিন এবং হালকা বাদামি রং না আসা পর্যন্ত ভাজুন। এরপর আদা বাটা দিন এবং এক থেকে দুই মিনিট ভাজুন।
- পেঁয়াজ রসুন ভাজা হয়ে গেলে হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুড়া দিন। মসলা ভালোভাবে মিশিয়ে ভাজতে থাকুন যতক্ষণ না তেল বের হতে শুরু করে।
- সেদ্ধ ডাল কড়াইয়ে মসলার সাথে মিশিয়ে নিন। প্রয়োজন অনুযায়ী পানি দিয়ে পাতলা বা ঘন করতে পারেন।
- ডাল মিশিয়ে কয়েক মিনিট রান্না করেন যতক্ষণ না সব উপকরণ ভালোভাবে মিশে যায় এবং কিছুটা ঘন হয়ে আসে।
- রান্না শেষ হয়ে গেলে ওপরে ধনেপাতা ছিটিয়ে দিন এবং কিছুক্ষণ ঢেকে রাখুন।
- মটর ডাল গরম ভাত বা রুটির সাথে পরিবেশন করতে পারেন।
এভাবে রান্না করে খেলে সঠিক পুষ্টি গ্রহণ পাবেন বলে আশা করা যায়। তবে রান্না শেষে লেবুর রস বা কাঁচা মরিচ যোগ করলে স্বাদ আরো বাড়তে পারে।
মটর ডাল সম্পর্কে সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর
মটর ডাল সম্পর্কে সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর গুলো আমাদের জানা থাকলে অনেক ভালো হয়। মটর ডাল সম্পর্কে কিছু সাধারণ প্রশ্ন মানুষ করে থাকে। কিছু সাধারন ও প্রশ্নের উত্তর নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
প্রশ্নঃ মটর ডাল কি?
উত্তরঃ মটর ডাল হলো এক প্রকার ডাল যা মটরশুঁটি থেকে তৈরি হয়। এটি বাংলাদেশ ও ভারতের খাদ্য সংস্কৃতিতে একটি জনপ্রিয় উপাদান। এটি বিভিন্ন তরকারি স্যুপ ও ভাতের সঙ্গে খাওয়া হয়।
প্রশ্নঃ মটর ডালে কি কি পুষ্ট প্রদান রয়েছে?
উত্তরঃ মটর ডালে প্রোটিন, আয়রন, ভিটামিন বি৬, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ফাইবার এ সকল পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান রয়েছে।
প্রশ্নঃ মটর ডালে কি কি স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়?
উত্তরঃ মটর ডালে বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য মটর ডাল খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখে, হজমে সাহায্য করে, পেশী গঠনের সাহায্য করে প্রভৃতি।
প্রশ্নঃ ডায়াবেটিস রোগীরা কি মটর ডাল খেতে পারেন?
উত্তরঃ হ্যাঁ, ডায়াবেটিস রোগীরা মটর ডাল খেতে পারেন। কারণ এতে গ্লাইসেমিক ইনটেক্স কম এবং রক্তের শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ায় না। যা ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। কিন্তু এটা বেশি পরিমাণে খাওয়া ঠিক না।
প্রশ্নঃ মটর ডাল কিভাবে রান্না করে খাওয়া যায়?
উত্তরঃ মটর ডাল বিভিন্ন ভাবে রান্না করে খাওয়া যায়। তবে ভালোভাবে সিদ্ধ করে মসলা দিয়ে খাওয়া যায় আবার এটি স্যুপ করে খাওয়াও যায়।
মটর ডালের সঠিক গ্রহণ মাত্রা
মটর ডালের সঠিক গ্রহণ মাত্রা আমাদের যদি এ বিষয়টি জানা থাকে তাহলে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ভালো। মটর ডালের সঠিক গ্রহণ মাত্রা জেনে খেলে আমাদের স্বাস্থ্যের উপকার হবে। কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে না। এই আর্টিকেলে তা আমি বিস্তারিত আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করেছি। নিম্নে মটর ডালের সঠিক গ্রহণ মাত্রা উল্লেখ করা হলো।
দৈনিক মটর ডালের গ্রহণ মাত্রা
- বেশিরভাগ পুষ্টিবিদ এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দৈনিক ৫০ থেকে ৭৫ গ্রাম মটর ডাল কাঁচা অবস্থায় খাওয়ার পরামর্শ দেন। তবে এই মাত্রাটি ব্যক্তির ওজন, দৈনন্দিন সক্রিয়তা এবং অন্যান্য খাদ্য গ্রহণের উপর নির্ভর করে থাকে।
সঠিক মাত্রা নির্ধারণের টিপস
- প্রতিদিনের মোট প্রোটিন চাহিদার প্রায় ২৫ থেকে ৩০% মটর ডাল থেকে আসতে পারে।
- যারা ওজন কমানোর পরিকল্পনা করছেন, তারা প্রতিদিন খাবারে ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম মটর ডাল অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
মটর ডাল খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি
- রান্না করার সময় তেল এবং মসলার পরিমাণ কম রাখার চেষ্টা করতে হবে। এটি সেদ্ধ করে বা স্যুপ হিসেবে খাওয়া যেতে পারে। এভাবে খেলে স্বাস্থ্যকর ও হালকা খাবার হিসেবে উপযুক্ত বলে বিবেচনা করা হয়।
শেষ কথা
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায় যে, মটর ডালের পুষ্টি উপাদান আমাদের শরীরকে অনেক ভালো রাখে, সেই সাথে আমাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এটি সঠিক পরিমাণে খাওয়া অনেক ভালো। অতিরিক্ত পরিমাণ গ্রহণ আমাদের এড়িয়ে চলা উচিত।
মটর ডাল একটি পুষ্টিগুনে ভরপুর খাদ্য যা স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি নিয়মিত খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করলে প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ পুষ্টি উপাদান শরীরে সরবরাহ হয়। যা সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। তাই এটি অতিরিক্ত গ্রহণ করা থেকে এড়িয়ে চলা উচিত।
জিনেউস আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url