মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষ পদ্ধতি-ভালো ফলনের এ টু জেড উপায়
মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষ পদ্ধতি এই আর্টিকেলে আমরা জানবো কিভাবে এই পেঁয়াজ চাষ করে ভালো বেশি ফলন পাওয়া যায়। মুড়ি কাটা পেঁয়াজ বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শীতকালীন ফসল। এটি সাধারণত মসলা হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে।
এই পেঁয়াজ সঠিক পদ্ধতিতে চাষ করলে এর ফলন অনেক ভালো হয় এবং অনেক লাভজনক হয়। মুড়ি কাটা পেঁয়াজ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জনপ্রিয়। এই পেঁয়াজ চাষের জন্য খুব বেশি উন্নত সরঞ্জাম বা জটিল প্রযুক্তির কোন প্রয়োজন হয় না।
সূচিপত্রঃ মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষ পদ্ধতি-ভালো ফলনের এ টু জেড উপায়
- মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষ পদ্ধতি
- মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষের আর্থিক লাভ
- মুড়ি কাটা পেঁয়াজের বিভিন্ন জাত
- মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষের জন্য উপযোগী সময় ও জলবায়ু
- মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষে জমি নির্বাচন ও প্রস্তুতিকরণ
- এই পেঁয়াজের বীজ বপণের পদ্ধতি
- মুড়ি কাটা পেঁয়াজের চারা তৈরি ও রোপণ
- এই পেঁয়াজের সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা
- এ পেঁয়াজ চাষের পর আগাছা পরিষ্কার ব্যবস্থাপনা
- মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষে রোগ ও পোকামাকড় প্রতিরোধ ব্যবস্থা
- এই পেঁয়াজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ
- শেষ মন্তব্য
মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষ পদ্ধতি
মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষ পদ্ধতি এই আর্টিকেলে আপনি মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। এই প্রবন্ধে আপনি এই পেঁয়াজ চাষের জন্য কেমন মাটির প্রয়োজন, কিভাবে জমি প্রস্তুত করতে হবে এবং কোন জলবায়ুতে এটি ভালো হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
এছাড়াও আপনি জানতে পারবেন কিভাবে বীজ বপণ করা যায়, কিভাবে চারা তৈরি ও রোপন করা যায় এবং কিভাবে সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা দিয়ে ভালো ফসল পাওয়া সম্ভব হয়। তাছাড়া বিভিন্ন রোগ ও পোকা-মাকড় প্রতিরোধের জন্য কি কি কী কীটনাশক বা ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে এবং কিভাবে এটি সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করতে হবে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষের আর্থিক লাভ
মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষের আর্থিক লাভজনকতা রয়েছে। এ পেঁয়াজ চাষ করলে কম খরচ হয়। সেই সাথে এর ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব হয়। তাই এই পেঁয়াজ কেউ যদি চাষ করে তাহলে আর্থিকভাবে অনেক লাভবান হয়। নিম্নে মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষ পদ্ধতি এই আর্টিকেলে মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষের আর্থিক লাভটি তুলে ধরা হলো।
মুড়ি কাটা পেঁয়াজ উৎপাদন খরচ তুলনামূলক অনেক কম এবং বাজারে চাহিদা অনেক বেশি থাকে। এটি এক একর জমিতে সঠিক পদ্ধতিতে চাষ করলে প্রায় ১০ থেকে ১২ টন ফলন পাওয়া সম্ভব হয়। বর্তমান বাজারদরে এটি অত্যন্ত লাভজনক। তাই আমি পরামর্শ দেবো যে এই পেঁয়াজ চাষ করে আপনি অনেক লাভবান হন। তবে এ পেঁয়াজ চাষে আপনাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে আবহাওয়া ও আপনার জলবায়ুর উপর।
আরও পড়ুনঃ বারি গম ৩৩ চাষ পদ্ধতি - বিঘায় ১৭ মণ ফলন
মুড়ি কাটা পেঁয়াজের বিভিন্ন জাত
মুড়ি কাটা পেঁয়াজের বিভিন্ন জাত চলুন এবার এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই। মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষ পদ্ধতি এই আর্টিকেলে আমরা এখন জানবো মুড়ি কাটা পেঁয়াজের বিভিন্ন জাত সম্পর্কে। মুড়ি কাটা পেঁয়াজের কয়েকটি উন্নত জাত রয়েছে । নিম্নে মুড়ি কাটা পেঁয়াজের বিভিন্ন জাত উল্লেখ করা হলো।
- বারি পেঁয়াজ ১
- দেশীয় মুড়ি কাটা জাত
- সুবর্ণা পেঁয়াজ
বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি উন্নত মানের মুড়ি কাটা পেজে জাত পাওয়া যায়। যেমন-
- দেশি জাত- এটি স্বাদে ও গন্ধে তীব্র, তবে ফলন অনেক কম।
- হাইব্রিড জাত- উচ্চ ফলনশীল এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি।
- বারি পেঁয়াজ ১,২,৩- বাংলাদেশের কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উন্নত জাত।
উন্নত জাতের পেঁয়াজ বেশি ফলন দেয় এবং রোগবালায় প্রতিরোধে কার্যকরী। প্রতিটি জাতের বৈশিষ্ট্য এবং স্থানীয় পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য অনুযায়ী জাত নির্বাচন করা উচিত।
মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষের জন্য উপযোগী সময় ও জলবায়ু
মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষের জন্য উপযোগী সময় ও জলবায়ু সম্পর্কে জানা অনেক জরুরী একটি বিষয়।এই পেঁয়াজ চাষের উপযোগী সময় ও জলবায়ু জানা থাকলে আমরা এর ভালো ফলন পাব বা ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। তাই মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষ পদ্ধতি এই প্রবন্ধে চলুন এ বিষয়টি এবার বিস্তারিত জেনে নেই।মুড়ি কাটা পেঁয়াজের সঠিক ফলনের জন্য আবহাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস বা অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষের জন্য উপযুক্ত সময়।
- হালকা ঠান্ডা ও কম বৃষ্টিপাত পূর্ণ পরিবেশের জন্য আদর্শ এই পেঁয়াজ চাষ। তাপমাত্রা প্রায় ১৩ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে ভালো হয়।
- মাঝারি মাটির আর্দ্রতা সবচেয়ে ভালো। অতিরিক্ত জলাবদ্ধতা হলে ফসল নষ্ট হতে পারে।
উপরে বর্ণিত এই সময় ও এরকম জলবায়ু হলে এই মুড়ি কাটা পেঁয়াজে অনেক ভালো ফলন পাওয়া যায়।
মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষে জমি নির্বাচন ও প্রস্তুতিকরণ
মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষে জমি নির্বাচন ও প্রস্তুতিকরণ চলুন এবার এ বিষয়টি জেনে নেওয়া যাক। এ বিষয়টি যদি আমাদের জানা থাকে তাহলে আমরা খুব সহজেই জমি নির্বাচন এবং প্রস্তুতি করতে পারবো। তাই চলুন নিম্নে এ বিষয়টি বিস্তারিত জেনে নেই।
- উঁচু পানি নিষ্কাশন সুবিধা যুক্ত মাটিতে দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটিতে ভালো হয়।
- জমির পিএইচ মান ৬ থেকে ৬.৫ হলে ভালো ফলন হয়।
- তিন থেকে চারবার চাষ দিয়ে জমি ঝুরঝুর করতে হবে।
- ৩০ সেন্টিমিটার গভীর চাষ দিতে হবে।
- প্রতিবার জমি চাষের পর আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
- জৈব সার যেমন পচা গোবর বা কম্পোস্ট সার প্রয়োগ করতে হবে।
- প্রতি অংশে জমিতে বা প্রতি শতাংশ জমিতে ১০ থেকে ১২ কেজি গরুর পচা গোবর মেশাতে হবে।
উপরের বর্ণনা অনুযায়ী জমি নির্বাচন এবং যদি আপনি জমি প্রস্তুত করেন তাহলে অবশ্যই ভালো ফলন পাবেন বলে আশা করা যায়।
এই পেঁয়াজের বীজ বপণের পদ্ধতি
এই পেঁয়াজের বীজ বপণের পদ্ধতি চলুন এ বিষয়টি এবার জেনে নেয়া যাক। নিম্নে মুড়ি কাটা পেঁয়াজের বীজ বপন পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
- উচ্চমানের বীজ ব্যবহার করতে হবে যেন রোগমুক্ত ও জীবাণুমুক্ত পাওয়া যায়।
- বীজতলায় মাটি ভালোভাবে ঝুরঝুরে করে বীজ ছিটিয়ে দিতে হবে।
- বীজের উপর পাতলা মাটি বা খড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
- প্রতিদিন হালকা সেচ দিন যাতে মাটি আর্দ্র থাকে।
- বীজ বপণের ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে চারা রোপনের জন্য উপযুক্ত হয়ে যায়।
উপরের বর্ণনা অনুযায়ী পেজ বপন পদ্ধতি অনুসরণ করলে, ভালোভাবে আপনি চারা উৎপন্ন করতে পারবেন। আর একটি ভাল মানের চারা ভালো মানের ফসল উপহার দিয়ে থাকে।
আরও পড়ুনঃ আম গাছে সার প্রয়োগ পদ্ধতি
মুড়ি কাটা পেঁয়াজের চারা তৈরি ও রোপণ
মুড়ি কাটা পেঁয়াজের চারা তৈরি ও রোপণ চলুন এবার এ বিষয়টি বিস্তারিত জেনে নেই। এ বিষয়টি যদি আমাদের জানা থাকে তাহলে চারা রোপণের সময় অনেক ভালো হয়। নিম্নে এ বিষয়টি বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
- চারাগুলো ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার উচ্চতা হলে জমিতে স্থানান্তর করতে হবে।
- সারি থেকে সারির দূরত্ব ১৫ থেকে ২০ সেন্টিমিটার হলে ভালো হয়।
- চারা থেকে চারার দূরত্ব ১০ সেন্টিমিটার হলে সবচেয়ে ভালো।
রোপনের পর জমি হালকা সেচ দিতে হয়। কেনোনা আপনি যদি হালকাভাবে সেচ দেন, তাহলে জমিতে চারাগুলো মাটির সাথে শিকড়গুলো ভালোভাবে আটকে যায়, এবং খুব তাড়াতাড়ি চারাগুলো সতেজ হয়ে ওঠে।
এই পেঁয়াজের সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা
এই পেঁয়াজের সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা চলুন এবার এ বিষয়ে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। সঠিক মাত্রায় সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা একটি জমিতে যদি পড়ে তাহলে ভালো ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই চলুন নিম্নে এ বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
- জৈব সার- ৮ থেকে ১০ টন প্রতি হেক্টরে দিতে হয়।
- রাসায়নিক সার- যেমনঃ ইউরিয়া ২৫০ কেজি
- টিএসপিঃ ১৫০ কেজি
- এমওপিঃ ১০০ কেজি
সার প্রয়োগ করার সময় তিন ভাগে ভাগ করে প্রয়োগ করা উচিত। এক ভাগ চারা রোপনের সময়, একভাগ এক মাস পর এবং শেষ ভাগ দেড় মাস পরে দিলে ভালো হয়। চারা রোপনের পর হালকা সেচ প্রয়োজন হয়। নিয়মিত জমে আর্দ্র রাখতে হয় তবে জলবদ্ধতা এড়িয়ে চলতে হবে।
এ পেঁয়াজ চাষের পর আগাছা পরিষ্কার ব্যবস্থাপনা
এ পেঁয়াজ চাষের পর আগাছা পরিষ্কার ব্যবস্থাপনা করতে হবে। নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। কেননা আগাছা বেশি থাকলে ফসলে অনেক ক্ষতি হয়। অতিরিক্ত পরিমাণে জমিতে যদি আগাছা থাকে তাহলে চারা বা গাছ নষ্ট করে দেয় ফলে ফলন কম হয়ে যায়। তাই নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার একটি ফসলের জন্য অনেক ভালো। নিম্নে মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষের পর আগাছা পরিষ্কার ব্যবস্থাপনা উল্লেখ করা হলো।
- প্রতি ১৫ থেকে ২০ দিনে জমি থেকে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। এমনভাবে পরিষ্কার করতে হবে যেন জমির এ প্রান্ত থেকে শেষ প্রান্ত পর্যন্ত ভালোভাবে পরিষ্কার হয়।
- আগাছা সরানোর সময় মাটির উপর ভাগ নরম রাখা দরকার।
মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষে রোগ ও পোকামাকড় প্রতিরোধ ব্যবস্থা
মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষে রোগ ও পোকামাকড় প্রতিরোধ ব্যবস্থা জানা থাকলে আমরা খুব সহজেই পোকা-মাকড় দমন করতে পারি। তাই চলুন মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষে বিভিন্ন রোগ ও পোকা-মাকড় প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেই।
- সাধারণ রোগ- যেমনঃ গোল্ডেন রট- এ রোগে পাতার গোড়া পচে যায়। এর সমাধান হচ্ছে (Ridomil gold) রিডোমিল গোল্ড জাতীয় ছত্রাক নাশক ব্যবহার করা।
- ব্লাস্ট রোগ- পাতায় দাগ পড়ে। এ রোগের সমাধান হচ্ছে, নষ্ট পাতা কেটে ফেলা। টিল্ট বা অন্য ছত্রাকনাশক স্প্রে করা।
- পোকা-মাকড়ের ভেতর দেখা যায় থ্রিপস- এ পোকা পাতার রস শোষণ করে। এর সমাধান হচ্ছে সুমিথিয়ন বা ডায়াজিনন (diaginon) ব্যবহার করা।
এই পেঁয়াজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ
এই পেঁয়াজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ ভালোভাবে করলে ফসল নষ্ট হয় না। দীর্ঘদিন ধরে ফসল ভালো থাকে। তাই চলুন পেঁয়াজ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ সম্পর্কে জেনে নেই।
- পেঁয়াজের পাতা হলুদ হয়ে শুকিয়ে গেলে সংগ্রহের উপযুক্ত সময়।
- সংগ্রহের পর পেঁয়াজগুলো তিন থেকে পাঁচ দিন রোদে শুকাতে হয়।
- শুকানোর পর বাঁশের ঝুড়ি বা জালিতে সংরক্ষণ করা ভালো।
শেষ মন্তব্য
উপরের বর্ণনা অনুযায়ী আপনি যদি এই পেঁয়াজ চাষ করেন তাহলে আশা করা যায় ফলনের দিক থেকে আপনি অনেক লাভবান হবেন এবং সেই সাথে যদি দাম ভালো থাকে তাহলে আপনি আর্থিকভাবে অনেক লাভবান হবেন।
বাংলাদেশের সচরাচর পেঁয়াজের দাম একটু বেশি দেখা যায়। তাই এই পদ্ধতি অনুসরণ করে মুড়ি কাটা পেঁয়াজ চাষ করে ভালো ফলন এবং আর্থিক লাভ নিশ্চিত করা সম্ভব।
জিনেউস আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url