বস্তায় রসুন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

বস্তায় রসুন চাষ পদ্ধতি এই আর্টিকেলে এখন আপনারা জানতে পারবেন কিভাবে বস্তায় রসুন চাষ করে উপকারিতা লাভ করা যায়। সেইসাথে আরো জানতে পারবেন বস্তায় রসুন চাষের এ টু জেড পদ্ধতি সম্পর্কে এবং এর সম্ভাব্য ফলন ও লাভ সম্পর্কে বিস্তারিত।

বস্তায়-রসুন-চাষ-পদ্ধতিবস্তায় রসুন চাষ একটি সহজ এবং সাশ্রয়ী পদ্ধতি যা শহর কিংবা গ্রামে সীমিত জায়গায় সবজি চাষে আগ্রহীদের জন্য উপযুক্ত। এই পদ্ধতিতে কম খরচে ও সহজ উপায়ে রসুন চাষ করা সম্ভব হয়। নিচে আমরা এ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেছি।

পেজ সূচিপত্রঃ বস্তায় রসুন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন

বস্তায় রসুন চাষ পদ্ধতি

বস্তায় রসুন চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে এখন আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো। বস্তায় রসুন চাষ একটি সহজ ও সাশ্রয়ী পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে কেউ যদি রসুন চাষ করে তাহলে অনেক খরচ কম হবে। কেনোনা এ পদ্ধতিতে সার এবং সেচ ব্যবস্থা খুব কম প্রয়োজন পরে। নিম্নের বিষয়গুলোতে আরো এ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।

রসুন আমাদের দৈনন্দিন রান্নায় অপরিহার্য একটি মসলা। এর পুষ্টিগুণ ও ওষুধি গুণের কারণে এটি সারা বিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয়। তবে স্থান ও সংকটের কারণে অনেকে এটি চাষ করতে পারে না। বস্তায় চাষের মাধ্যমে খুব সহজে এবং অল্প জায়গায় রসুন উৎপাদন করা সম্ভব হয়। তাই সকল চাষীরা যদি এই পদ্ধতিতে রসুন চাষ করে, তাহলে অল্প জায়গায় অল্প খরচে খুব সুন্দর ভাবে রসুন উৎপাদন সম্ভব।

বস্তায় রসুন চাষ বর্তমানে এটি সহজ ও সাশ্রয়ী একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে শহরের মানুষ নিজ ছাদের উপরে খুব সহজেই চাষাবাদ করতে পারছে। এছাড়া গ্রামে যাদের জায়গার সংকট রয়েছে তারা বাড়ির কিছু আঙিনায় বস্তাতেই রসুন চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছে। নিম্নের বিষয়গুলোতে এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত আপনাদের মাঝে তুলে ধরা হবে।

বস্তায় রসুন চাষের কয়েকটি উপকারিতা

বস্তায় রসুন চাষে বেশ কয়েকটি উপকারিতা লক্ষ্য করা যায়। বস্তায় রসুন চাষ পদ্ধতি এই আর্টিকেলে এখন আমরা এ বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। নিম্নে বস্তায় রসুন চাষের কয়েকটি উপকারিতা উল্লেখ করা হলো।

বস্তায় রসুন চাষের উপকারিতা
  • বাসা বা শহরের বিল্ডিংয়ের ছাদে চাষ করা যায়।
  • সহজলভ্য উপকরণ ব্যবহার করা যায়।
  • সার ও কীটনাশক কম প্রয়োজন হয়।
  • মাটি ও পানির অপচয় রোধ হয়।
  • কম জায়গায় চাষ করা যায়।

এ সকল উপকারিতা গুলো বস্তায় রসুন চাষ করার মাধ্যমে উপভোগ করা যায়। অর্থাৎ বস্তায় রসুন চাষ করলে উপরে বর্ণিত সকল উপকারগুলো পাওয়া যায়।

বস্তায় রসুন চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম

বস্তায় রসুন চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম লাগে। এ সকল সরঞ্জাম ছাড়া বস্তায় রসুন চাষ করা সম্ভব নয়। বস্তায় রসুন চাষ পদ্ধতি এ প্রবন্ধে এখন আমরা এ বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। নিম্নে বস্তায় রসুন চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম গুলো উল্লেখ করা হলো।

বস্তায় রসুন চাষের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম
  • উর্বর মাটি বেলে-দো'আঁশ বা দো'আঁশ মাটি হলে ভালো হয়।
  • মাঝারি বা বড় আকারের পলিথিন বা জুটের বস্তা দরকার।
  • পানি নিষ্কাশন এবং বস্তা ছিদ্র করার জন্য ছুরি প্রয়োজন।
  • রসুনের ভাল জাতের কন্দ বা কোয়া প্রয়োজন।
  • জৈব সার বা পচা গবর সার প্রয়োজন।

বস্তায় রসুন চাষ করতে হলে উপরে বর্ণিত সরঞ্জাম গুলো ঠিকঠাক মতো সংগ্রহ করতে হবে। আপনি যদি বস্তায় রসুন চাষের জন্য এ সকল প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম গুলো ঠিকঠাক মতো সংগ্রহ না করেন তাহলে কাজের ক্ষেত্রে অনেক ব্যাঘাত ঘটবে।

বস্তায় রসুন চাষের কয়েকটি পর্যায় বা ধাপসমূহ

বস্তায় রসুন চাষের কয়েকটি পর্যায় বা ধাপসমূহ আপনাদের মাঝে এখন বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হবে। বস্তায় রসুন চাষ পদ্ধতি এই প্রবন্ধে এখন আমরা এ বিষয়টি আলোচনা করবো। নিম্নে বস্তায় রসুন চাষের কয়েকটি পর্যায় বা ধাপসমূহ উল্লেখ করা হলো।
বস্তায়-রসুন-চাষের-কয়েকটি-পর্যায়-বা-ধাপসমূহ
  • একটি মাঝারি আকারের বস্তা নির্বাচন করতে হবে এরপর বস্তার নিচের দিকে পানি নিষ্কাশনের জন্য কয়েকটি ছোট ছিদ্র করে নিতে হবে।
  • দো'আঁশ মাটি জৈব সার ও সামান্য বালু মিশিয়ে মাটির মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। এরপরে মিশ্রণটি বস্তায় ভরে দিতে হবে, তবে বেশি চেপে দেয়া যাবে না।
  • রসুনের বড় এবং স্বাস্থ্যকর কোয়া বাছাই করতে হবে। কোয়া গুলোকে কিছুক্ষণ রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।
  • বস্তার মাটিতে দুই থেকে তিন ইঞ্চি গভীর গর্ত তৈরি করতে হবে। প্রতিটি গর্তে একটি করে রসুনের কোয়া বসাতে হবে। কোয়ার অগ্রভাগ উপরের দিকে রাখুন এবং মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
উপরে বর্ণিত এই ধাপগুলো যদি আপনি সঠিকভাবে মেনে রসুন চাষ পদ্ধতিটি করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই আসানুশুরুপ ভালো ফলাফল পাবেন বলে আশা করা যায়। তাই সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে উপরের বর্ণিত বিষয়গুলো বিশেষভাবে লক্ষ্য করুন।

বস্তায় রসুন চাষের পর যেভাবে পরিচর্যা করবেন

বস্তায় রসুন চাষের পর যেভাবে পরিচর্যা করবেন সে বিষয় সম্পর্কে চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক। বস্তায় রসুন চাষ পদ্ধতি এই আর্টিকেলে এখন আমরা বস্তায় রসুন চাষের পরিচর্যার ব্যাপারে আলোচনা করবো। নিম্নে বস্তায় রসুন চাষের পর যেভাবে পরিচর্যা করবেন সেটা তুলে ধরা হলো।

  • নিয়মিত পানি দিতে হবে, তবে বেশি পানি দেয়া যাবে না। কেনোনা বস্তাতে বেশি পানি জমতে দেওয়া যাবে না। তানাহলে গাছ মরে যাওয়া সম্ভাবনা রয়েছে।
  • ১০ থেকে ১৫ দিনে একবার জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে এটি প্রথম বার দেওয়ার পর আরেকবার দিলে আর জৈব সার না প্রয়োগ করলেও হবে।
  • আগাছা দেখা দিলে সরিয়ে ফেলতে হবে। এমনিতেই বস্তায় আগাছা খুব কম হয়, তবে যতটুকু আগাছা হয় ততটুকু সাথে সাথে সরিয়ে ফেলতে হবে। তাহলে গাছ ভালো থাকবে।
উপরের বর্ণনা অনুযায়ী আপনি সুন্দরভাবে পরিচর্যা করতে পারেন। এভাবে পরিচর্যা করলে আপনার রসুন গাছ অনেক সুন্দর হবে বলে আশা করা যায় এবং সেই সাথে ভালো ফলন পাবেন বলে আশা করা যায়।

বস্তায় রসুন চাষে রোগ ও পোকা-মাকড় দমন ব্যবস্থা

বস্তায় রসুন চাষে রোগ ও পোকা-মাকড় দমন ব্যবস্থা অনেকের জরুরী একটি বিষয়। এ সময় যদি কোনো রসুনের রোগ বা পোকা-মাকড়ের আক্রমণ হয় তা নির্মূলে সাথে সাথে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। তা নাহলে গাছ নষ্ট হয়ে যাবে এবং ফলন কমে আসবে। তাই বস্তায় রসুন চাষে রোগ ও পোকা-মাকড় দমন ব্যবস্থা খুব দৃঢ়তার সাথে করতে হবে। নিম্নে বস্তায় রসুন চাষে রোগ ও পোকা-মাকড় দমন ব্যবস্থা উল্লেখ করা হলো।

  • রসুন চাষে রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রতি ১৫ দিন পর পর নিম তেল স্প্রে করা যেতে পারে।
  • যদি পোকা-মাকড়ের আক্রমণ বেশি হয় তাহলে উপযুক্ত কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। যেমন-
  • পাতায় বেগুনি রঙের দাগ দেখা দিলে ম্যানকোজেব বা ক্লোরোথালোনিল ভিত্তিক ছত্রাকনাশক ১৫ দিন অন্তর স্প্রে করতে হবে।
  • পাতার আগা শুকিয়ে বাদামি হয়ে গেলে এ ধরনের রোগের আক্রমণে কপার অক্সিক্লোরাইড বা প্রোপিকোনাজোল স্প্রে করতে হবে।
  • গাছের গোড়া দুর্বল হয়ে পড়লে এ ধরনের রোগে মাটিতে কার্বোফিউরান বা ফেনামিফোস প্রয়োগ করতে হবে।
  • পাতার রং উজ্জ্বল সাদা বা রুপালি হয়ে গেলে ও গাছ দুর্বল হয়ে পড়লে এ ধরনের রোগে স্পিনোসাড বা ইমিডাক্লোপ্রিড কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।
  • তবে পরিবেশ বান্ধব হলো বায়োপেস্টিসাইড যেমন- নিম তেল, ট্রাইকোডার্মা।

বস্তায় রসুন চাষে ফসল তোলার পদ্ধতি

বস্তায় রসুন চাষে ফসল তোলার পদ্ধতি চলুন এবার এ বিষয়ে সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। বস্তায় রসুন চাষ করলে এটি কিভাবে উত্তোলন করা যাবে বা কত দিনে উত্তোলন করতে হবে সে বিষয় সম্পর্কে এখন আমরা বিস্তারিত জেনে নেব। নিম্নে বস্তায় রসুন চাষে ফসল তোলার পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো।
বস্তায়-রসুন-চাষে-ফসল-তোলার-পদ্ধতি
  • মূলত রসুন একটি তিন মাসি (৩ মাস ) ফসল হিসেবে ধরা হয়। কেনোনা এটি ৯০ দিন অর্থাৎ তিন মাসের মধ্যেই পরিপক্ক হয়ে যায়। এ সময় রসুন উত্তোলন করা যায়।
  • রোপনের ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে রসুন সংগ্রহ করা যায়। রসুনের পাতা শুকিয়ে গেলে এটি তোলার উপযুক্ত সময় হিসেবে ধরা হয়।
  • বস্তায় রসুন চাষে উত্তোলনের সময় মাটি হালকা আলগা করে নিয়ে তুলতে পারেন। অথবা হাত দিয়ে টেনে তুলতে পারেন।

বস্তায় রসুন চাষে সম্ভাব্য ফলন ও লাভ

বস্তায় রসুন চাষের সম্ভাব্য ফলন ও লাভ সম্পর্কে এখন আমরা বিস্তারিত জেনে নেব। বস্তায় রসুন চাষে যেহেতু জায়গা কম লাগে সেহুতো এতে কম খরচ হয়। কম খরচে কম সার ও সেচ ব্যবস্থাপনার কারণে এর যে ফলন হয় তা অবশ্যই লাভজনক বলে আশা করা যায় বা ধরা হয়। নিম্নে বস্তায় রসুন চাষে সম্ভব ফলন ও লাভ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।

  • একটি মাঝারি বস্তা থেকে প্রায় দেড় থেকে ২ কেজির রসুন উৎপাদন সম্ভব। এর মাধ্যমে অল্প বিনিয়োগে ভালো লাভ করা যায়।
  • আপনি যদি বস্তা খাড়া না রেখে সোজাসুজি ফেলে রসুন চাষ করেন, তাহলে এর থেকে প্রায় তিন থেকে চার কেজি পরিমাণ রসুন উৎপাদন সম্ভব। 
  • এ থেকে বোঝা যায় যে এটা কম খরচে অধিক ফলনের কারণে লাভের পরিমাণ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই বলা যায় যে বস্তায় রসুন চাষে সম্ভাব্য ফলন এবং লাভ অনেক।

পরিশেষে আমার মতামত

উপরের সকল আলোচনা হতে বলা যায় যে বস্তায় রসুন চাষ একটি সহজ ও সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব একটি পদ্ধতি। আবার এ পদ্ধতিতে অল্প খরচে অধিক পরিমাণ লাভ করা যায়। তাই আসুন বাড়ির আশেপাশে এবং ছাদের জায়গা ফেলে না রেখে আমরা এভাবে বস্তায় রসুন চাষে আগ্রহী হই।

বস্তায় রসুন চাষ একটি সহজ এবং পরিবেশবান্ধব, যা সবার জন্য সহজলভ্য। এটি কেবল স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখায় না বরং বাসার আঙ্গিনা বা ছাদেও কৃষির আনন্দ এনে দেয়। তাই আসুন আমরা সবাই মিলে রসুন চাষে আগ্রহী হই।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জিনেউস আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url